রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিচুতলায় বিজেপি বা তার সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনও সমঝোতা চলবে না। এরকম খবর এলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে। দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষে পার্টির নেতা-কর্মীদের এমনই কড়া বার্তা দিল আলিমুদ্দিন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাম-বাম সমঝোতার চর্চার মধ্যেই বুধবার রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও (Sitaram Yechury) স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘‘বিজেপির সঙ্গে কোনও সমঝোতার প্রশ্নই নেই। বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। ‘নো ভোট টু তৃণমূল’ বলে বিজেপি এখন বামেদের পাশে টানার চেষ্টা করছে। বিজেপির বিরুদ্ধে আদর্শগত লড়াই চলবে সিপিএমের (CPIM)।’’ যদিও সিপিএম নেতৃত্ব বিজেপি-ছোঁয়া এড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা চালালেও নিচুতলায় তা আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। সম্প্রতি সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনেও বিজেপির ভোট পেয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। এই অভিযোগ করেছে শাসকদল। আবার তা মেনেও নিয়েছিল বিজেপি নেতৃত্ব। কাজেই পঞ্চায়েতে সেই সাগরদিঘির মডেল যে হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? প্রশ্ন সিপিএমের একাংশেরই।
পার্টির একাংশ বলছে, মুখে না বললেও মহাজোটই হবে। বহু জায়গায় বাম-কংগ্রেস-বিজেপিকে একসঙ্গে দেখা যাবে। এরই মধ্যে আবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে আরএসএস (RSS) জোটের প্রস্তাব নিয়ে আসছে নিচুতলায়। পার্টির বিভিন্ন জেলা কমিটির সম্পাদকরা রিপোর্ট দিয়েছেন যে, বিজেপি নিচুতলায় নেই ঠিকই। কিন্তু ‘নো ভোট টু তৃণমূল’ (No Vote to TMC) বলে আরএসএস নিচুতলায় মহাজোটের প্রস্তাব দিচ্ছে সিপিএমকে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই রিপোর্টে শঙ্কিত আলিমুদ্দিনও। রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছে, এখনই যদি সতর্ক হওয়া না যায় তাহলে পার্টির ক্ষতি হবে। এই বিষয়েই বুধবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে জবাবি ভাষণে মহম্মদ সেলিম (Mohammad Selim) নেতৃত্বকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সিপিএমকে নিজেদের জোরেই লড়তে হবে। বিজেপির সঙ্গে কোনওরকম সমঝোতা হলে শাস্তির ব্যবস্থা হবে। তবে পঞ্চায়েতে নিচুতলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা যে হচ্ছেই তা অবশ্য এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। সেলিম এদিন বলেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপির বিরোধিতায় বামফ্রন্ট লড়বে। ফ্রন্টের বাইরে বাম দলগুলিকেও একজোট করা হবে। বাম ছাড়াও যে কোনও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সাহায্যও নেওয়া হবে।’’
সেক্ষেত্রে কংগ্রেস (Congress) ও আইএসএফের (ISF) পাশাপাশি এসইউসি, লিবারেশনের সঙ্গেও আসন সমঝোতা করেই এগোবে সিপিএম। এমনটা স্পষ্ট করে সেলিমের দাবি, আগামী সাতদিনের মধ্যেই জেলাস্তরে পঞ্চায়েতে আসন সমঝোতার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত ভোটে মহাজোটের ডাক দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। শুভেন্দুর সেই জোটবার্তায় সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব এদিন জল পুরো জল ঢেলে দিয়েছেন। পাশাপাশি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও (Dilip Ghosh) বলেছেন, বিজেপি লড়াই করার পক্ষে একাই যথেষ্ট। ফলে এই মহাজোট নিয়ে দ্বিমত উঠে এসেছে বিজেপির মধ্যেই। শুভেন্দুর বিপরীত সুর শোনা গিয়েছে দিলীপের মুখে।
এদিকে, বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি-বিরোধিতায় তৃণমূলকে বিরোধী জোটে নেওয়া হবে? তৃণমূলের বিরোধিতা করেও এই সম্ভাবনা নিয়ে এখনই কিছু স্পষ্ট করেননি সীতারাম। তৃণমূল (TMC) তো একসময় এনডিএ’র সঙ্গে ছিল, পরবর্তী ক্ষেত্রেও আবার যেতে পারে, এই মন্তব্য করেও ইয়েচুরি অন্য উদাহরণও দিয়েছেন এই প্রশ্নের উত্তরে। সিপিএম সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘২০০৪ সালে সারা দেশে বামপন্থী দলগুলি ৬২টি লোকসভার আসন জিতেছিল। তার মধ্যে ৫৭টি আসনে কংগ্রেসকে হারিয়েছিল বামেরা। কিন্তু ভোটের পর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকেই আবার সমর্থন করেছিল সিপিএম। ইয়েচুরির সাফ কথা, ‘‘ভোটের পর কার কী ‘কমিটমেন্ট’ রয়েছে তা দেখেই সিদ্ধান্ত হবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.