সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুঃসময় যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিলাসবহুল জীবনযাপন ও নারীঘটিত কেচ্ছার জন্য দল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পর সংকটমোচনের জন্য মন্দিরে পুজো দিয়েও কাটল না বিপদ। বরং বিতর্ক যেন আরও বেড়ে গেল। কমিউনিস্ট পার্টির একজন সাংসদ কী করে মন্দিরে গিয়ে পুজো দিলেন, শ্বেতবস্ত্র ধারণ করলেন, তাই নিয়ে উঠে গেল প্রশ্ন। ঋতব্রত পুজো দেওয়ার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনায় সরব হয়েছেন নেটিজেনরা। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সিপিএমের অন্দরেও।
রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে কেরলে গিয়েছিলেন। সেখানে ধুতি ও চাদর গায়ে গুরুভায়ুরে শ্রীগুরুভায়ুরাপ্পন মন্দিরের সামনে সমাজবাদী পার্টির সাংসদ কিরণময় নন্দ-সহ কয়েকজন সাংসদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন ঋতব্রত। ওই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ওঠে। বিরোধীরা তো বটেই, বাম সমর্থকদের একাংশও ফেসবুকে ঋতব্রতর মুণ্ডপাত করতে থাকেন। কথিত রয়েছে, কেরলের ওই মন্দিরে ভক্তিভরে পুজো দিলে নাকি পুণ্যার্থীর সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়। একের পর একে বিপদে পড়ে বিব্রত ‘কমিউনিস্ট’ ঋতব্রত সম্ভবত সে কারণেই পুজো দিতে গিয়েছিলেন সেখানে। সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য বামপন্থী নেতারা। ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে গেলে ধুতি ও সাদা চাদর পরতে হয়। ভক্তিভরে সেই পোশাকও পরেন ঋতব্রত। তাঁর এই ‘অকমিউনিস্টসুলভ’ আচরণকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি নেটিজেনরা।
এই প্রথম নয় অবশ্য, এর আগেও বহুবার দেশের একাধিক মন্দিরে ঘুরে পুজো দিয়েছেন ঋতব্রত। একটি সূত্রের দাবি, এর আগে তিনি মাদুরাইয়ের মীনাক্ষ্মী মন্দির, বেঙ্গালুরুর নন্দীশ্বর মন্দির পরিদর্শনে যান। অবশ্য সিপিএমে এই সংস্কৃতি নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিনের বাম বিধায়ক ও বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা হজযাত্রা করেছেন। তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিয়ে সুভাষ চক্রবর্তী আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানিয়েছিলেন, আমি আগে ব্রাহ্মণ, পরে কমিউনিস্ট। হাল আমলে কালীপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে বিতর্কে জড়ান সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। তাই এবার দলের সাসপেন্ডেড সাংসদকে মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখে অনেকেই বলছেন, “এটাই বামেদের রেওয়াজ।” সিপিএমের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের অন্দরেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা হয়েছে। তবে সিপিএম সাংসদ নাকি এবার পুজো দেননি, শুধু রীতি মেনে মন্দিরের পোশাক পরেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে অযথা জলঘোলা করছে দলের একটি গোষ্ঠী, বলছেন ঋতব্রত ঘনিষ্ঠরা। কী বলছেন খোদ ঋতব্রত? তিনি অবশ্য মন্দিরে পুজো দেওয়ার ঘটনায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সম্প্রতি বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য কড়া শাস্তি পান সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ৷ তাঁকে আগামী তিন মাসের জন্য দল থেকে ‘সাসপেন্ড’ করা হয়। ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মহম্মদ সেলিম, মৃদুল দে ও মদন ঘোষ। আগামী ২ আগস্টের মধ্যে ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে। যতদিন না ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়, ততদিন পর্যন্ত ‘সাসপেন্ড’ থাকবেন অভিযুক্ত সিপিএম সাংসদ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.