সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলা কথাসাহিত্যের দুনিয়ায় ইন্দ্রপতন। ৯৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই সাহিত্যিক।
লেখালিখি ঘোষণা করে থামিয়ে দিয়েছিলেন আগেই। বাংলা সাহিত্যে যা প্রায় বিরল সিদ্ধান্ত। নিজের কলম তুলে রাখার ঘোষণা সহজ নয়। রমাপদ চৌধুরী ব্যতিক্রম। তিনি জানতেন কোথায় থামতে হয়, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন বেশ কিছুদিন আগেই। তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম সেরা কলমটিই হাতে ছিল তাঁর। বলা ভাল, নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় জারিত করে এই অননুকরণীয় কলমটি তৈরি করেছিলেন তিনি। ১৯২২ সালে খড়গপুরে তাঁর জন্ম। শৈশব কেটেছে ওই ছোট শহরেই। তবে বাবার চাকরির সূত্রে গোটা ভারতবর্ষ দেখে ফেলেছিলেন সেই অল্প বয়সেই। দেখেছিলেন দেশের রূপান্তর, মধ্যবিত্ত জীবনের পট পরিবর্তন। দেখেছিলেন রাজনীতির উথালপাথাল আর সংকট। তার ফলে বদলে যাওয়া সমাজ আর মধ্যবিত্তের মন। আসলে মানুষ তো তাঁর অভিজ্ঞতাকেই লিখে যায়। সেই বিপুল ও বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতাই ধরা আছে তাঁর কাহিনির প্লটে, বয়নে, বিন্যাসে। সতেরো আঠেরো বছরে লেখা গল্প ‘উদায়স্ত’। প্রকাশিত হয়েছিল যুগান্তর পত্রিকায়। সেই গল্পেই তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্য পেতে চলেছে এক নতুন পদাতিককে। এপর প্রকাশিত হয় ‘বারো ঘোড়ার আস্তাবল’। বাংলা সাহিত্যও পেয়ে যায় একটি স্থায়ী ভাষাকে।
[ স্নাতক ডিগ্রিতে বিপ্লবী প্রীতিলতার পদবিতে বিভ্রাট! ব্যাপারটা কী? ]
পেশাগতভাবে সম্পাদনা করেছেন পত্রিকা। পত্রিকা দপ্তরের চার দেওয়ালের মধ্যে কর্মজীবন বাঁধা থাকলেও তাঁর অন্তর্দৃষ্টি দেখতে পেত ভারতবর্ষের আত্মা। তাই মধ্যবিত্রের সুখ-দুঃখের আখ্যানেই তিনি চিনিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর দেখা ও চেনা ভারতবর্ষকে। সাধারণত প্রচারবিমুখ। সভা-সমিতিতে বিশেষ দেখা যেত না তাঁকে। তবে বাংলা সাহিত্যের তন্নিষ্ঠ পাঠক জানেন, রমাপদ চৌধুরীর কাহিনি আসলে এক বৃহত্তর ক্যানভাস। যেখানে অলংকার সরিয়ে রেখে নির্মেদ ঋজু ভাষার আঁচড়ে তিনি ফুটিয়ে তুলছেন এক একটি শাশ্বত চিত্র। তাঁর কলমই তাঁর তুলি। আর সেই তুলির এক একটা স্ট্রোকে কখনও ফুটে উঠেছে ‘দ্বীপের নাম টিয়া রং’, কখনওবা লেখা হয়েছে ‘বনপলাশীর পদাবলী’। রাজনৈতিক দর্শন থেকে সমাজজীবনের এত বিচিত্র অন্ধিসন্ধিতে তিনি ভ্রমণ করেছেন, আলো ফেলেছেন মনস্তত্বের এত গহীন অরণ্যে যা পাঠককে একই সঙ্গে মোহাবিষ্ট করেছে এবং ভাবিয়েওছে।
১৯৮৮ সালে পেয়েছিলেন সাহিত্য অকাদেমি সম্মান। পেয়েছেন আনন্দ পুরষ্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার-সহ একাধিক সম্মান। অক্ষরে সমাজজীবনের দর্পণ রচনা করতেন পারতেন বলেই চলচ্চিত্রকারাও একাধিকবার তাঁর কাহিনি পর্দায় তুলে এনেছেন। যার মধ্যে অন্যতম ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘একদিন অচানক’, ‘খারিজ’ প্রভৃতি। আজ ৯৬ বছর বয়সে জীবনাবসান হল তাঁর। নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্য হারাল তাঁর অন্যতম সেরা নক্ষত্রটিকে। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.