ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: স্বাধীনতার আগে নেতাজির সঙ্গে যে ধরনের রাজনীতি করা হয়েছিল, আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গেও সেই একই রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগে সুর চড়ালেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। উভয়ের পরিপ্রেক্ষিত পৃথক, কিন্তু তাঁদের দু’জনের সঙ্গেই যে রাজনৈতিক আচরণ করা হয়েছে, তার মধ্যে যথেষ্ট মিল খুঁজে পেলেন ব্রাত্য বসু। তাঁর মতে, বাঙালির ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে অবাঙালি শক্তি তার ঘাড়ের উপর চেপে বসতে চাইছে। বাংলার মাটিতে শাসনক্ষমতা কায়েম করতে চাইছে অবাঙালি নেতারা। এদিন তৃণমূল ভবনে বিজেপি (BJP) বিরোধিতায় দীর্ঘ বক্তব্যে এমন অনেক প্রসঙ্গ তুলেই আক্রমণ শানালেন রাজ্যের মন্ত্রী।
একুশে বাংলা দখলের টার্গেট নিয়ে জোরকদমে নেমে পড়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের ৫ সাংগঠনিক জোনের দায়িত্বে আনা হয়েছে ৫ কেন্দ্রীয় নেতাকে। তারপর থেকে ‘বহিরাগত’ তত্ত্বে জোর দিয়ে পালটা আক্রমণে নেমেছে রাজ্যের শাসকদলও। ইতিমধ্যে সুখেন্দুশেখর রায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যদের মতো অভিজ্ঞ সাংসদ, মন্ত্রীরা সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপিকে বিঁধেছেন।
শুক্রবার আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়ে সেই কাজই আরও এগিয়ে নিয়ে গেলেন দলের অন্যতম বাগ্মী নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আর তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে, তার সঙ্গে আজকের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাযুজ্য খুঁজে বোঝালেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা বাংলার সরকারের প্রতি দিল্লির যে আচরণ, তা আসলে বাঙালি বিদ্বেষী আচরণ। দেশ থেকে দেশান্তরে যে বিপুল বাঙালি মেধা ছড়িয়ে রয়েছে, তাকে দমন করতে না পেরে এ রাজ্যের শাসনক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে বিজেপি।
পাছে তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়, তাই এও স্পষ্ট করে দিলেন যে নেতাজি এবং মমতার তুলনা করছেন না তিনি। কারণ, উভয়ের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পৃথক। কিন্তু বিজেপির আচরণ তাঁকে নেতাজির পরিণতির কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কংগ্রেসত্যাগের ইস্যুতে অবশ্য তিনি দু’জনকে একই পংক্তিতে বসিয়েছেন। তাঁর কথায়, ”কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে নতুন দল গঠন করেন সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhas Chandra Bose)। ফরওয়ার্ড ব্লক তৈরি হয়। তৈরি হয় আজাদ হিন্দ বাহিনী। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস।” এরপর জনগণের প্রতি তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, এভাবে বাংলার সংস্কৃতি না জানা, রাজনীতি না জানা লোকজনকে দিয়ে বাঙালিকে দমন করার প্রয়াস কি বাংলার মানুষ মেনে নেবেন?
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিজেপি যদি ধর্মীয় ভেদাভেদকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতির জন্য ঝাঁপায়, তাহলে ব্রাত্য বসুর বক্তব্যে স্পষ্ট যে তৃণমূলও আরেক বিভেদকে এক্ষেত্রে হাতিয়ার করছে, আর তা হল বাঙালি-অবাঙালি বিভেদ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.