সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অমর্ত্য সেনের পর অর্থনীতিতে ফের নোবেল জয় বাঙালির। দারিদ্র দূরীকরণের দিশা দেখিয়ে সস্ত্রীক নোবেল জয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সন্তানের সাফল্যে গর্বিত নোবেলজয়ীর মা। আবার পুত্রবধূও একই কৃতিত্বের অধিকারী। তাই কলকাতার হিন্দুস্থান পার্কের বাড়িতে বসে ছেলে এবং তাঁর স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে গর্বিত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার দুপুর। এদিক সেদিক আচমকাই কানে ভেসে আসে দারুণ সুখবর। ফের নোবেল জয় বাঙালি অর্থনীতিবিদের। কিন্তু সেই সফল ব্যক্তিটি কে? হিন্দুস্থান পার্কের বাড়িতে বসে যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেননি নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যে তাঁর নিজের সন্তান। নিজের ছেলেই যে বিশ্বজয় করে ফেলেছে তা যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কিছুক্ষণ। তারপর সম্বিত ফিরল ঘনঘন শুভেচ্ছার জোয়ারে। কখনও ফোনে ভেসে আসছে শুভেচ্ছাবার্তা তো আবার কখন বাড়ি বয়ে এসে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন কেউ। বাড়িতে ভিড় সামাল দিতে পারা যাচ্ছে না কিছুতেই। ছেলের সাফল্যে গর্বিত মা। একটাই কথা তাঁর মুখে, “ছেলে যে এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে তা যেন ভাবতেই পারিনি।” ছেলের সাফল্য বর্ণনা করতে গিয়ে যেন ভাষাও হারিয়ে ফেলছেন নির্মলাদেবী। হাসি যেন আর বাঁধ মানছে না রত্নগর্ভা মায়ের।
নির্মলাদেবী নিজেও একজন অর্থনীতিবিদ। অভিজৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবাও অর্থনীতির অধ্যাপক। এমন পরিবারের সন্তান যে অর্থনীতির দিকে ঝুঁকবেন, তা আর নতুন কী? নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বললেন ঠিক সেরকমই। তিনি বলেন,”ছোট থেকেই আমার ছেলে অত্যন্ত মেধাবী। সাউথ পয়েন্টেই পড়াশোনা করে। সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে পড়ার আগ্রহ দেখায় অভিজিৎ। তাই ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভরতি হয়েছিল। কিন্তু এরপর পড়াশোনা এবং গবেষণার জন্য অর্থনীতিকে বেছে নেয় ছেলে।” মায়ের কথায় অল্প বয়স থেকে অর্থনীতির মতো কঠিন বিষয়কে বেশ ভালবেসে ফেলেছিলেন নোবেলজয়ী। খুব সহজেই নাকি সকলকে অর্থনীতির মতো জটিল বিষয়ও বুঝিয়ে দিতে পারতেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ক্ষমতা এবং মেধাই হয়তো নোবেল জয়ের পথকে আরও সুগম করেছে বলেই দাবি মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
মা এবং বাবা অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়াই কী গবেষণার পথ আরও সুগম করল অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের? প্রশ্নের উত্তর যদিও হাসির ভঙ্গিমাতেই প্রায় বুঝিয়ে দিলেন নির্মলাদেবী। এরপর তিনি বলেন, “হাত ধরে কিছুই শেখাইনি ছেলেকে। আমার মনে হয় যা বাবা-মা করেন তা একটা শিশু দেখে শেখে। তেমনই আমরাও অর্থনীতি নিয়ে বেঁচেছি। তাই হয়তো ছেলেও তাই করেছে। তবে ও যে নোবেল জয় করতে পারে তা ভাবিনি। প্রায়ই ওর সঙ্গে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় আমার। কোনও কোনও সময় আমি বলি এটা নিয়ে কাজ করতে পারো বা ওটা নিয়ে করতে পারো। তাতে অবশ্য আমার ছেলে হ্যাঁ-ও বলে মাঝে মধ্যে।”
আপাতত বিদেশেই স্ত্রী এসথার ডাফলোকে নিয়ে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তবে চলতি মাসেই দিল্লিতে একটি বইপ্রকাশ রয়েছে তাঁর। তাই দেশে ফেরার কথা। সেই সময় ছেলে কথা দিয়েছেন কলকাতায় আসবেন। আপাতত ছেলেকে কাছে পাওয়ার প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন রত্নগর্ভা মা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.