অর্ণব আইচ: সিসিটিভির ‘ফ্রেম টু ফ্রেম’ নজরদারি। তাতে আর জি কর হাসপাতালের অন্য কোনও তলা বা ঘর থেকে নির্যাতিতাকে সেমিনার রুমে নিয়ে আসার কোনও প্রমাণ পেল না সিবিআই। এমনকী, গত ৯ আগস্ট আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সকাল এগারোটার আগে হাসপাতালে ঢুকেছেন, সিসিটিভি দেখে এমন প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে সিবিআইয়ের দাবি। ফলে তিনি ভোররাতে আর জি করে গিয়েছিলেন, সেই প্রমাণ এখনও আসেনি সিবিআইয়ের হাতে। তাই আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তথ্য ও প্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রে এখন সিবিআইয়ের মূল ভরসা সেই মোবাইলের কল রেকর্ড।
আর জি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তে বিভিন্ন মহল থেকে বহু তথ্য আসে সিবিআইয়ের হাতে। প্রত্যেকটি তথ্যই যাচাই করার জন্য সিসিটিভির ফুটেজের উপর গুরুত্ব দেন সিবিআই আধিকারিকরা। গত ৮ আগস্ট সকাল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালের অন্তত ৫৩টি সিসিটিভির ফুটেজের ‘ফ্রেম টু ফ্রেম’ পরীক্ষা করেন সিবিআই আধিকারিকরা। এ ছাড়াও গত জুলাই মাসের শুরু থেকে সিসিটিভিগুলির ফুটেজের উপর নজর রাখতে শুরু করে সিবিআইয়ের টিম। সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের উপর বিশেষ নজর ছিল আধিকারিকদের। এর মধ্যে একটি তিন নম্বর সিসিটিভি ক্যামেরা, যেটি ছিল ট্রমা সেন্টারের প্রবেশদ্বারের কাছে। অন্যটি হচ্ছে আট নম্বর সিসিটিভি ক্যামেরা। ওই ক্যামেরাটি রয়েছে ‘রেসপিরেটরি বিভাগ’-এর পুরুষ ওয়ার্ডের উত্তর দিকের দেওয়ালে। ওই দুটি ক্যামেরায় নজরদারি করা যায় সেমিনার হলের উপর। ওই দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের প্রত্যেকটি ফ্রেমের উপর নজরদারি করে সিবিআই এই মামলার মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে গত ৯ আগস্ট ভোরে সেমিনার হলের দিকে ঢুকতে ও তার আধ ঘণ্টা পর বের হতে দেখা গিয়েছে। এ ছাড়াও রাত দুটো ও ও ভোর তিনটে নাগাদ অন্য যে দুই চিকিৎসককে সেমিনার হলে প্রবেশ করতে দেখা যায়, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও ‘সন্তুষ্ট’ সিবিআই।
অথচ খুন ও ধর্ষণের তদন্ত শুরু করার পর চিকিৎসক-সহ বিভিন্ন মহল থেকে সিবিআই আধিকারিকদের এমন তথ্যও দেওয়া হয় যে, হাসপাতালের ওই বিল্ডিংয়ের অন্য তলা অথবা ঘরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতিতাকে মারধর করা হয়। তাঁকে অচেতন অবস্থায় অন্য তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে অথবা লিফটে করে নামিয়ে সেমিনার হলে ফেলে রাখা হয়। পরে সঞ্জয় রায় গিয়ে যৌন নির্যাতন চালায়। কিন্তু সিবিআইয়ের মতে, নির্যাতিতাকে অচেতন অবস্থায় নামাতে গেলে অন্তত চারজনের প্রয়োজন। বিষয়টি খুব গোপনীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। সেই কারণে, সিবিআই নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাঁদের পলিগ্রাফ পরীক্ষাও করায়। আবার অন্য প্রত্যেকটি তলার সিসিটিভি ও চারতলার তিন ও আট নম্বর সিসিটিভির ক্যামেরার ফুটেজের প্রত্যেকটি ফ্রেম খতিয়ে দেখেন সিবিআই আধিকারিকরা। কিন্তু তাঁকে নিয়ে আসা হচ্ছে, ফুটেজে এমন কোনও প্রমাণ পায়নি সিবিআই।
এদিকে, সিবিআইয়ের কাছে এমন খবর আসে যে, আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ৯ আগস্ট ভোররাতে হাসপাতালে চলে এসেছিলেন। ভোর থেকে সকালের মধ্যে হাসপাতালে নিজের অফিসে বসেই তিনি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তথ্য ও প্রমাণ লোপাট করেন। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, সিসিটিভির ফুটেজে সকাল এগারোটার আগে সন্দীপ ঘোষ হাসপাতালে যান, এমন প্রমাণ আধিকারিকরা পাননি। তবে দুই ধৃত সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের ফোনের কল রেকর্ড থেকে তথ্য এবং প্রমাণ লোপাট, ষড়যন্ত্রের কিছু প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.