ফাইল ছবি
আবার কি বউবাজারে ফিরল আতঙ্কের ২০১৯ সালের ৩১ আগস্টের রাত? ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেন বারবার এমন ঘটনা, তারই ব্যাখ্যা শোনালেন নির্মাণ বিশেষজ্ঞ চন্দ্রচূড় ভট্টাচার্য।
১. মেট্রোর নির্মাণের (Metro Project) সময় কেন ফাটলের সম্ভাবনা তৈরি হয়?
মাটির অনেকটা নিচে যদি খোঁড়া হয়, তা হলে তার আশপাশের মাটি সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ, মাটির নিচে যখন খননকার্য চলে, জল বেরোতে থাকে। তার সঙ্গে মাটির উপাদানও বের হয়। পাম্পের মাধ্যমে জল বের করে জলস্তর নামানো হয়। মাটির স্তরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখনই মাটি এক জায়গা থেকে অন্যত্র কিছুটা সরে যায়। মাটির নিচে এই টানাপোড়েনের জেরে মাটির উপরিভাগে থাকা বাড়িগুলিতে ফাটল দেখা দিতে পারে।
২. বারবার বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনেই ফাটল কেন?
বউবাজার (Bow Bazar) এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে সবই সাধারণত দুই অথবা তিনতলা বাড়ি। অনেক বাড়ির বয়সও একশো—দুশো বছর। বাড়িগুলির অধিকাংশের ভিত চার থেকে পাঁচ ফুট। তখন গভীর ভিত করে বাড়ি তৈরির চল ছিল না। কলামের বাড়ি না হওয়ায় একটা রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে। কারণ তলার মাটি যখন সরে যাচ্ছে, তখনই উপরের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থা তৈরি হচ্ছে। এই টানেই ফাটল দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও ওই এলাকায় বাঁকের ব্যাপার রয়েছে। সেটিও সমস্যা বাড়াতে পারে।
৩. আগেরবার কি এই কারণেই ফাটল হয়েছিল?
আগেরবার টানেল বোরিং মেশিন মাটি কাটতে কাটতে একটি ‘অ্যাকুইফার’-এ ধাক্কা মারে। অ্যাকুইফারে ধাক্কা মারায় সেখান থেকে জল-সহ একাধিক মাটির উপাদান বের হতে থাকে দ্রুত গতিতে। সেটি পাম্প করে তোলার সময় ওই অংশে শূন্যস্থান তৈরি হয়। তা ভরাট করতে আশপাশ থেকে মাটি ও জল সেখানে সরে আসে। এই মাটি আসা-যাওয়ার ফলে আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
৪. বুধবার কেন ফাটল দেখা দিল?
মাটি কাটার কাজ শেষ হওয়ার পর টানেল বোরিং মেশিন তোলার সময় সম্ভবত শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির সমস্যা ছিল। ফলে জল ও মাটির পরিস্থিতি সারাক্ষণই বদল হচ্ছে। সেজন্যই এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
৫. এই ঘটনা কি ২০১৯ সালেই প্রথম?
না, এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও মেট্রো কর্তৃপক্ষ এমন সমস্যা সামলেছে। বহু আগে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ মেট্রো স্টেশন তৈরির সময় মাটির উপরিভাগের বহু বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। তখন সেগুলি মেরামত করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত সেভাবেই ওই বাড়িগুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
৬. দুর্গা পিতুরি লেনে কি ফের বাড়িতে ফাটল আসতে পারে?
আগেরবার ফাটল দেখা দেওয়ার পর মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু বাড়িগুলি যথেষ্ট পুরনো। তবে মেরামত করা হলেও আগের অবস্থায় ফেরে না। কিন্তু আগের বার ফাটলের পর বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তখন ৬০টির বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। এবার মাত্র সাত-আটটিতে। আগের বারের সতর্কতামূলক পদক্ষেপের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্যই এবার ফাটল এক-দশমাংশে এসে ঠেকেছে। আগামী দিনে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আশা করা যায়, এই সমস্যা আর দেখা দেবে না।
৭. কী করলে সমস্যা ঠেকানো যেতে পারে?
সয়েল ইমপ্রুভমেন্ট করলে সমস্যা কমে। এছাড়াও গ্রাউটিং করতে হবে। গ্রাউটিং অর্থাৎ সিমেন্ট, জল ও একাধিক রাসায়নিক ব্যবহার করে মাটির সঙ্গে মেশানো হয়। এভাবেই সয়েল ইমপ্রুভমেন্ট সম্ভব।
৮. কয়েকদিন পরেই চালু হতে চলেছে ফুলবাগান—শিয়ালদহ মেট্রো। ফের কি এমন সমস্যা দেখা দেবে?
না, এমন সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণ নেই। টানেল গোল হয়। সেজন্য এটি এমনিতেই স্থিতিশীল। এটির চারধারে মাটির চাপ পরিমাণ মতো থাকে। রেললাইনেও কুশন পাতা হয়। ফলে কম্পন তেমনভাবে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আমার মনে হয়, মেট্রো চলার সময় কম্পনজনিত সমস্যা দেখা দেবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.