স্টাফ রিপোর্টার: তৃণমূলে থাকলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যাবে না। তাদের জন্য দরজা খোলা আছে। চলে যেতে পারেন।
দলীয় বৈঠকে আবারও কড়া বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন এই বার্তা? তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন মমতা নিজেই। তাঁর কথায়, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত আদর্শের। কেন্দ্রে একটি জনবিরোধী সরকার। তারা মানুষের পাশে নেই। দেশজুড়ে অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক বিভাজন করা হচ্ছে। তাই কেন্দ্রে পরিবর্তন চায় তৃণমূল। ২০১৯ সালে দিল্লির ক্ষমতা বদলই লক্ষ্য। লড়াইটা অনেক বড়। এই সময় ঘরের মধ্যে থেকে যারা শত্রু শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তাদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না। যোগ রাখা যাবে না সিপিএমের সঙ্গেও। বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করে মমতা এদিন বলেন, “নারদ নিয়ে আজ রোজ কাউকে না কাউকে ডেকে হেনস্তা করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করছি বলেই এটা হচ্ছে। ওরা আরও এই ডাকাডাকি করবে। কিন্তু কিছু হবে না। চমকে কোনও লাভ নেই।”
শুক্রবার কালীঘাটে দলীয় অফিসে ছিল তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক। বৈঠকে দলের সর্বস্তরের নেতৃত্ব সাংসদ, জেলা সভাপতি, শাখা সংগঠনের পদাধিকারীরা ছিলেন। পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসছে। তার পর লোকসভা ভোটও। স্বভাবতই লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সময় উন্নয়নই তৃণমূলের হাতিয়ার। পাশাপাশি দলে শৃঙ্খলাই শেষ কথা। বরাবরই এই বৈঠকগুলি থেকে সাংগঠনিক খুঁটিনাটিকে গুরুত্ব দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি তাঁর নিজস্ব নেটওয়ার্কে জেলা থেকে গ্রাম, নেতারা-জনপ্রতিনিধিরা কে কী করছেন, তার বিস্তারিত খবর তিনি পেয়ে যান। হাতের পাঁচটা আঙুল সমান হয় না। তাই একটি-দু’টি ক্ষেত্রে বেনিয়মের বিহিত তিনি করে দেন এই কোর কমিটিতেই। এদিনও তেমন কিছু ঘটনা।
প্রসঙ্গ হুগলি। জেলা সভাপতি মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তকে তীব্র ভর্ৎসনা। জেলার সাংগঠনিক কাজে গাফিলতির অভিযোগ। না শোধরালে সব পদই চলে যাবে বলে তাঁকে সতর্ক করেন নেত্রী। প্রবীর ঘোষাল ও অসীমা পাত্রকে দায়িত্ব দেন জেলার কার্যকরি সভাপতির। পর্যবেক্ষক করা হয় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্ত্রী মন্টু পাখিরা, সওকত মোল্লা, জয়ন্ত নস্কর, উত্তর ২৪ পরগনার দোলা সেন, মুর্শিদাবাদের মন্ত্রী জাকির হোসেন-তালিকাটা দীর্ঘ। সব নাম লেখা গেল না। সবাই নেত্রীর রোষে পড়েন। অভিযোগ নানাবিধ। কারও ক্ষেত্রে সাংগঠনিক গাফিলতি, গোষ্ঠীকোন্দল আবার কারও ক্ষেত্রে অনিয়মে মদত। মমতা কোনও ঢাকঢাক-গুড়গুড় রাখেননি। জনগণের পরিষেবা থেকে বিচ্যুত হলে তিনি এমনই কঠিন-কঠোর মনোভাব নেবেন তা বুঝিয়ে দেন। শৃঙ্খলা না মানলে দল করা যাবে না। কাউকে রেয়াত নয়। দলকে না জানিয়ে শত্রুপক্ষের চ্যানেলে বসা কেন? কৈফিয়ত চেয়েছেন প্রবীণ সাধন পাণ্ডের কাছেও। সাংসদ ইদ্রিশ আলিকে বলেছেন, প্রয়াত সুলতান আহমেদকে দেখে শেখ। আদর্শের সঙ্গে সবাইকে নিয়ে দলটা করত। আর তুমি ঝগড়া কর। শান্তা ছেত্রীকে পাহাড়ের মানুষের পাশে থাকতে বলেছেন নেত্রী।
সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা প্রত্যেকেই ছিলেন বৈঠকে। মুকুল রায়ের হাতে ছিল উত্তর-পূর্ব ভারত। সেগুলি এখন থেকে দেখবে সব্যসাচী দত্ত। মুকুল দেখবেন পাঞ্জাব। উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে বিহার, ঝাড়খন্ড দেখবে অর্জুন সিং। এদিকে সামনে পুজো। শেষ না হতেই মহরম। যেভাবে বিজেপি ভেদাভেদের রাজনীতি করছে, তাতে ওই সময় গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা হতে পারে বলে খবর। মমতা এ নিয়ে আগে প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন, এদিন দলকেও। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পুজোয় সবাইকে এলাকাতেই থাকতে হবে। ছুটি নিয়ে বাইরে বেড়াতে যাওয়া চলবে না। কারণ এলাকায় এলাকায় সম্প্রীতি রক্ষায় বড় দায়িত্ব নিতে হবে তৃণমূলকে। দলীয় বৈঠক বাড়িয়ে দিতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব মানুষকে পাশে নিয়ে এই সময়ে চলতে হবে। বৈঠক যেন একটি পরিবার। আর সেই পরিবারের অভিভাবক স্বয়ং মমতা। শুধু বকাঝকাই নয়। ভাল কাজ করলে তার প্রশংসাও মেলে বৈঠক থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.