গৌতম ব্রহ্ম: যে রাজ্যের উৎসবকে শিরোপা, সে-ই ডাক পেল না শিরোপা প্রদানের মঞ্চে। বাংলার দুর্গোৎসবকে আর্ন্তজাতিক ঐতিহ্য-স্বীকৃতির অনুষ্ঠানে অপাংক্তেয় করে রাখা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আয়োজিত বাংলার দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি উদযাপনের অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণপত্র পাননি কেউই। ওইদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পাশে বাংলার পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)।
এহেন ঘটনায় বিস্মিত বাংলার পুজো কমিটি থেকে শুরু করে শিল্পীবৃন্দ। বঙ্গের দুর্গাপুজো কমিটির সংগঠকরা বলছেন, কারণ যথেষ্ট। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছিল বাংলার শারদোৎসব। যদিও এই স্বীকৃতি আদায় অতি সহজে হয়নি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার শারদোৎসবের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে উদ্যোগী হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিভাগে। মুখ্যমন্ত্রীর করা সেই আবেদনের মূল্যায়ন করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। সেই বিচারেই এবার হেরিটেজ তকমা পায় দুর্গাপুজো। অথচ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ব্রাত্য?
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের কর্মকর্তা শাশ্বত বসুর কথাতেও বিস্ময়ের সুর। এমন ঘটনায় হতবাক শাশ্বত বসু জানিয়েছেন, এর থেকে দুঃখজনক কিছু হয় না। যাঁর জন্য দুর্গাপুজো স্বীকৃতি পেল তিনিই বাদ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছাড়া বাংলার দুর্গাপুজো এই উচ্চতায় পৌঁছতো? প্রশ্ন ছুঁড়েছেন তিনি। একইসঙ্গে কোনও পুজো কমিটির কর্মকর্তা আমন্ত্রণ না পাওয়ায় উগড়ে দিয়েছেন ক্ষোভ। দেশের তো বটেই, সারা পৃথিবীর নানান স্থাপত্যের নিঁখুত কারুকার্য মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলেন বাংলার শিল্পীরা। যে কারণে পৃথিবীর প্রতিটি কোণা থেকে শরতের মরশুমে মানুষ ছুটে আসেন পুজোর বাংলায়। বাংলার দুর্গাপুজোর ইতিহাস বড় কম নয়। দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী সনাতন দিন্দার প্রশ্ন, উক্ত অনুষ্ঠানে কে শোনাবেন সেই ইতিহাস? রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়?
দুর্গাপুজো আর্ন্তজাতিক সম্মান পাওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে (Victoria Memorial Hall) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। বাঙালি শিল্পীরা উপস্থিত থাকলেও রাজ্য সরকারের তরফে প্রতিনিধি হিসেবে কাউকেই ডাকা হয়নি। শিল্পীদের সমবেত দাবি, সে অনুষ্ঠানে দুর্গাপুজো নিয়ে বলার অধিকার মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল। সনাতন দিন্দার কথায়, মুখ্যমন্ত্রী সাহায্যের হাত না বাড়ালে ডানা মেলতে পারতো না দুর্গাপুজো। কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র রাজনীতি করার অছিলায় আপামর বাঙালিকে অপমান করলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.