রিংকি দাস ভট্টাচার্য: গাছের ডালে সার সার ঝুলে রয়েছে বাদুড়। ফল খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে, ফেলছে, ছড়াচ্ছে। আর সেই পড়ে থাকা ফলের পাশ দিয়েই দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে জনতা। কেরল বা দক্ষিণের কোনও রাজ্য নয়, এ দৃশ্যের দেখা মিলছে খাস কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায়। বাদুড়বাহিত নিপা রোগের আতঙ্কে যখন সারা দেশ থরহরি কম্প, সেইসময় শুধুমাত্র নোটিস জারি করেই দায় সেরেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
[মোবাইলের ‘সিম সোয়াইপ’ করে উধাও ২৬ হাজার টাকা]
সোমবারই চিড়িয়াখানায় জারি হয়েছে নিপা সতর্কতা। বাগানে পড়ে থাকা ফল না খেতে এবং পশু-পাখিদের না খাওয়াতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফলাহারী বাদুড় নিপা ছড়াচ্ছে। তাই যে কোনও পড়ে থাকা ফলে নিপার জীবাণু ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শুধু নোটিস জারি করেই কি চিড়িয়াখানায় আসা পর্যটকদের বিপদ থেকে দূরে রাখা সম্ভব? চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্তর সাফ জবাব, নোটিস দেওয়া ছাড়া কর্তৃপক্ষের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়। “আমরা তো আর বাদুড় তাড়াতে পারব না। দর্শকদেরই নিজের তাগিদের হুঁশিয়ার হতে হবে”, মন্তব্য আশিসবাবুর। তাঁর কথায়, বাদুড়গুলো শুধুমাত্র আশ্রয় এবং খাবারের সন্ধানে আসে চিড়িয়াখানায়। দিনের আলো কমতেই রওনা দেয় অন্যত্র। ফের ভোরবেলা আসে। এমতাবস্থায় বাদুড়কে দূরে রাখা কার্যত অসম্ভব। উল্লেখ্য, আলিপুর চিড়িয়াখানা জুড়ে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠালের গাছ। সেই ফল খেয়েই দিনগুজরান হয় বাদুড়ের। চিড়িয়াখানার এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, বহু বছর ধরেই বাদুড়ের আনাগোনা চিড়িয়াখানায়। এতদিন এই নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু নিপা ভাইরাসের খবর ছড়াতেই এদের নিয়ে এত মাথাব্যথা, নোটিস।
[ট্রেনের ছাদে উঠে বিপত্তি, ওভারহেডের তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বেঘোরে প্রাণ গেল ভবঘুরের]
কিন্তু কর্তৃপক্ষের দেওয়া ওই নোটিস অনেকেরই নজর এড়িয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন পর্যটকরা। “কোথায় নোটিস? চোখে পড়েনি তো? নিরাপত্তারক্ষীরাও কিছু বলেননি”। কথাগুলো বলার সময় চোখ কপালে উঠল খড়দহের বলাই সেনগুপ্তর। তাঁর মতে, এক জায়গায় নোটিস লটকে দিলে কারও চোখে পড়বে না। কর্তৃপক্ষের উচিত লিফলেট বিলি করা। সোমবার চিড়িয়াখানায় আসা আরেক দর্শনার্থী শ্রীকান্ত চৌধুরি বলেন, লিফলেট সবাই না দেখতেও পারেন। মাইকিং করে লোকজনকে সতর্ক করা জরুরি। গরমের ছুটি পড়তেই চিড়িয়াখানায় ভিড় জমাচ্ছেন বহু দর্শনার্থী। মূলত খুদেদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু এদিন চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেল, যত্রতত্র পড়ে রয়েছে আধখাওয়া আম,জাম। দু’এক জায়গায় মরা বাদুড় পড়ে থাকলেও হেলদোল নেই কর্তৃপক্ষের। নীরব নিরাপত্তারক্ষীরাও। ক্ষুব্ধ দর্শনার্থীরা জানালেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ না করলে ছুটির মরশুমে খুদেদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসতে ভয় পাবেন অভিভাবকরা।
ছবি: পিন্টু প্রধান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.