দীপঙ্কর মণ্ডল: পরীক্ষায় বসা মানেই পরের ক্লাসে উতরোনোর ছাড়পত্র পাওয়ার জমানা আর থাকছে না। আগামী শিক্ষাবর্ষেই রাজ্যের স্কুলে স্কুলে ফিরে আসছে পাশ-ফেল প্রথা। উত্তরপত্র মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত হওয়ার পদ্ধতি আপাতত শুরু হচ্ছে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে। ব্যর্থ পড়ুয়াদের অবশ্য ফের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও পাস নম্বর না পেলে আগের ক্লাসেই থাকতে হবে।
প্রাথমিক স্তরে পাশ-ফেল প্রথা তুলে দিয়েছিল বাম সরকার। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আমলে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল উঠে যায়। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার ‘শিক্ষার অধিকার আইন’ এনে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘নো ডিটেনশন’ চালু করে। নতুন সেই আইন অনুযায়ী প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও ছাত্র বা ছাত্রীকে একই ক্লাসে আটকে রাখা যায় না। ২০০৯-এর সেই আইন তিনবছর পরে এ রাজ্যে মান্যতা পায়। পরে শিক্ষাবিদদের পরামর্শে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় সরকারই বিষয়টির সংশোধনী আনার কথা ভাবতে শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গের মতো দেশের অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্য স্কুলস্তরে পাশ-ফেল চালুর পক্ষে মত জানায়। রাজ্য সরকার যে স্কুলস্তরে পাশ-ফেল চালুর পক্ষে তা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে বিশেষজ্ঞ কমিটি স্কুলশিক্ষা দপ্তরে রিপোর্ট দেয়। তা পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। স্কুলশিক্ষা দপ্তর সূত্রের খবর, নবান্ন থেকে বিকাশ ভবনে সবুজ সঙ্কেত এসেছে। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই বিষয়ে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি।
রাজ্য সরকার কোন ক্লাস থেকে পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনবে তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। এদিন জানা গিয়েছে, প্রাথমিকের শেষ ধাপ পঞ্চম শ্রেণি এবং উচ্চ প্রাথমিকের শেষ ধাপ অষ্টম শ্রেণিতে ‘নো ডিটেনশন’ থাকবে না। বামফ্রন্টের সহযোগী শিক্ষক সংগঠনগুলি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘নো ডিটেনশন’-এর পক্ষে। তাঁদের যুক্তি, স্কুলছুট কমানোর উদ্দেশে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়া হয়েছিল। স্বপন মণ্ডলের মতো বাম শিক্ষক নেতাদের দাবি, নয়া ব্যবস্থায় ফের স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়বে। সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা চিঠি দিয়ে আবেদন করেছিলাম কোনও পড়ুয়া অকৃতকার্য হলে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার মাধ্যমে তাকে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হোক। প্রস্তাবটি মান্যতা পাওয়ায় রাজ্যের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।”
রাজ্য সরকারের গড়া কমিটির একটি অংশ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল চালুর পক্ষে মত জানিয়েছিল। অন্য অংশটি প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ-ফেল চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর ঠিক হয়েছে আপাতত শুধু দু’টি ক্লাসেই পাশ-ফেল চালু হবে। নয়া নির্দেশিকা প্রকাশের আগে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের কোনও কর্তা এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। এমনকি শিক্ষামন্ত্রীকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র এ প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্য সরকার পাশ ফেল ফিরিয়ে আনার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবাংলার শিক্ষাপ্রেমী ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছিলেন। এই সিদ্ধান্ত সেই আন্দোলনেরই জয়। আমরা মনে করি, পাশ-ফেল শুধু পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ফিরিয়ে আনলেই হবে না। আমাদের দাবি, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা ফিরিয়ে আনতে হবে।” আটের দশকে রাজ্য সরকার এবং পরে কেন্দ্রীয় সরকার পাশ ফেল-প্রথা তুলে দেওয়ার ফলে এ রাজ্যের তো বটেই এমনকি গোটা দেশের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করে সমিতি। প্রথম শ্রেণী থেকে পাশ ফেল প্রথা ফেরানোর দাবিতে ফের আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.