স্টাফ রিপোর্টার: ভোটের দিন বাহিনী মোতায়েনের রাশ কি এবার দিল্লির হাতে? বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জেলাশাসক, রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার এবং আইজি বিএসএফ, আইজি সিআরপিএফের সঙ্গে দিনভর নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India) ফুল বেঞ্চের বৈঠকে এমনই ইঙ্গিত মিলল।
বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্ব যেহেতু রাজ্যের হাতেই থাকে তাই পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হলেও তা ঠিকমতো মোতায়েন করা হয় না বলে বরাবর অভিযোগ ওঠে। যে যখন বিরোধী দলে থাকে তখনই এই অভিযোগ তোলে। সেকথা মাথায় রেখেই এবার ভোটের দিনেও বাহিনী নিয়ন্ত্রণের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে কমিশন। অর্থাৎ রাজ্যে এবার একাধিক পুলিশ নোডাল অফিসার নিয়োগ হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএসএফ (BSF) বা সিআরপিএফের (CRPF) কোনও কর্তাকে পুলিশের নোডাল হিসাবে নিয়োগ করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। ভোট চলাকালীন এই নোডাল অফিসাররাই বাহিনী মোতায়েনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিশন যে এবার সবদিক দিয়েই চাপ বাড়াবে তার ইঙ্গিত মিলেছে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বৃহস্পতিবার কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে ফুল বেঞ্চের সাফ বক্তব্য, ‘‘কেরিয়ারে দাগ লাগাবেন না। কোনও সাফাই নয়। এবার সরাসরি সাসপেন্ডের পথে হাঁটবে কমিশন।’’
রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে যে কমিশন নাখুশ তা রাজ্যে এসেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। বুধবার রাজ্যে পা রেখেই সিইও আরিজ আফতাবেকেও সেই বার্তা দিয়েছিল ফুল বেঞ্চ। বৃস্পতিবার প্রথমার্ধে পুলিশের নোডাল অফিসার তথা এডিজি ল অ্যন্ড অর্ডার জ্ঞানবন্ত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরার (Sunil Arora) নেতৃত্বাধীন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর না হওয়ায় রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছে তারা। এডিজি ল অ্যান্ড অর্ডারকে কমিশনের সাফ বার্তা, ভোটের অনেক আগে থেকেই ভয়মুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন। কমিশনের সমস্ত নির্দেশ ১০০ শতাংশ কার্যকর করুন। সূত্রের খবর, এ দিন আগে থেকেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত একটি তৈরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন জ্ঞানবন্ত সিং। সম্ভাব্য অপরাধী ও যারা গোলমাল পাকাতে পারেন সেই সংক্রান্ত একটি তালিকাও তিনি কমিশনের কাছে এদিন পেশ করেন। মোট ৫০ হাজার জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানার মধ্যে আপাতত ১০ হাজার পরোয়ানা কার্যকর করা গিয়েছে। সূত্রের খবর, কমিশনকে এডিজি ল’ অ্যন্ড অর্ডার জানিয়েছেন কোভিড ও আমফানের কারণে পরোয়ানা কার্যকর করা যায়নি। চলতি মাসের মধ্যে তা কার্যকর করা সম্ভব হবে। তাঁকে নির্দেশগুলি যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
পাশাপাশি ফুল বেঞ্চ স্পষ্ট করে দিয়েছে প্রতিবারের মতো এবারও ভোটের কাজে কোনওভাবেই সিভিক ভলান্টিয়ার (Civic) ও গ্রিন পুলিশকে কাজে লাগানো যাবে না। এডিজি ল’ অ্যান্ড অর্ডার ছাড়াও এদিন ভোটে কত সংখ্যক বাহিনী পাওয়া যাবে তা যাচাই করতে আই জি বিএসএফ, আই জি সিআরপিএফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কমিশন কর্তারা। রাজ্যে বর্তমানে যে সংখ্যক বাহিনী রয়েছে তাঁর পরিসংখ্যান নিয়েছে কমিশন। এছাড়াও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলির পরিস্থিতিও যাচাই করেছেন কমিশন কর্তারা। পাশাপাশি রাজ্যে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা বলা হয়েছে। এদিন সব শেষে সমস্ত জেলার শাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে বসে কমিশন। জেলাগুলিকে অবিলম্বে স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি ভোটের যাবতীয় প্রস্তুতি আপ-টু-ডেট রাখতে বলা হয়েছে। জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিকস্তরে অফিসারদের বদলির তথ্যও এদিন নিয়েছে কমিশন। বেশ কিছু জেলাকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ও হেলিককপ্টার তৈরি রাখতে বলা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.