কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: ফেসবুকে আকর্ষণীয় মহিলার বন্ধুত্বের অনুরোধ। তাতে সাড়া দিয়ে অল্পদিনের মধ্যেই গাঢ় সম্পর্ক। বান্ধবীর একান্ত অনুরোধে অচেনা এবং অতীব লাভজনক ব্যবসায় মোটা লগ্নি। তারপর সেই টাকা খুইয়ে শেষমেশ পুলিশের দ্বারস্থ। সচরাচর যেমনটা হয়ে থাকে এক্ষেত্রেও তাই হল। খেপে খেপে ৮২ লক্ষ টাকা গুণে দেওয়ার পর সল্টলেকের ব্যবসায়ী জানতে পারলেন কোনও মহিলা নয়, আদপে নাইজেরিয়া ও আইভরি কোস্টের দুই পুরুষ বিদেশির পাল্লায় পরে টাকা খুইয়েছেন তিনি।
সল্টলেকের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কুশল দাস মহাপাত্র এই মর্মে বিধাননগর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সাইবার থানা তদন্তে নেমে দুই বিদেশিকে বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের নাম, ডোনাস আরনল্ড প্যাট্রিক এবং বেক আসরো। বিদেশিনী বলে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাঠিয়েছিলেন কুশলবাবু, সেই মহিলার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি আদপে ভুয়ো। যা তৈরি করেছিল ‘নাইজেরিয়ান গাং’য়ের (Nigerian Gang) সদ্যসরা। ইদানীং, সাইবার ক্রাইম প্রতারণার ক্ষেত্রে এই গাংয়ের অন্যতম টার্গেট কলকাতা এবং বিধাননগর বলে ধারণা তদন্তকারীদের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে এই গ্যাং-এর অপরাধের ধরণ বেশ চমকপ্রদ। প্রথমে এই দলের সদস্যরা ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করে। ঘনিষ্ঠতা বাড়তেই বলা হয়, আপনি লটারি জিতেছেন বা বিদেশ থেকে গিফট পাঠিয়েছি। যা নিতে আসতে হবে বিমানবন্দরে। তবে এই দুটি ক্ষেত্রেই শর্ত হিসেবে বলা হয়, গিফট বা লটারির বিপুল পরিমাণ টাকা আপনার হাতে পৌঁছনোর জন্য যে খরচ হয়েছে তা আপনাকে বহন করতে হবে। এই ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই ইতিমধ্যে লক্ষাধিক টাকা খুইয়েছেন। এটিএম কার্ড ক্লোনিং করে টাকা হাতানোর কাজেও সিদ্ধহস্ত এই গাংয়ের সদ্যসরা। আবার, বন্ধুত্ব তৈরির পর ব্যবসায়িক অংশীদার করে সেই ব্যবসায় টাকা ঢালতে বলে। তারপর বিনিয়োগের টাকা হাতিয়ে নেয়। যার শিকার হয়েছেন কুশলবাবু।
পুলিশ সূত্রে খবর, সল্টলেক, নিউটাউন এলাকায় নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কুশলবাবু থাকেন সল্টলেকেই। ওই বিদেশীনি কুশলকে বলেছিলেন, হার্বাল বীজ ব্যবসার অংশীদার হতে। এজন্য ৮২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আর এই সামগ্রী দেশে তো বটেই, বিদেশের বাজারে বিক্রি করে যা টাকা তিনি বিনিয়োগ করেছেন তার তিনগুণ টাকা রোজগার হবে বলে জানান ওই বিদেশীনী। সে কথা বিশ্বাস করে মাস ছয়েকের আলাপে ওই টাকা প্রথমে ১৫ তারপর ৩০ ও তার পরের খেপে বাকিটা দিয়ে দেন কুশল। আর টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের পর উল্টোদিক থেকে যোগাযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এরপরেই বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হন কুশল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কুশলের সঙ্গে ওই বিদেশীনি যোগাযোগ করেছিলেন সেই অ্যাকাউন্টের আইপি আড্রেস এবং যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছিল তার কে ওয়াই সি খুঁটিয়ে দেখে জানা যায়, অভিযুক্তরা বেঙ্গালুরুতে লুকিয়ে আছে। এরপরেই সোমবার সেখানে রওনা দেন সাইবার ক্রাইম থানার ৫ অফিসার। বেঙ্গালুরু পুলিশের সহযোগিতায় বুধবার রাতে ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে সাইবার থানার পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে রাউটার এবং ক্লোনিং মেশিন উদ্ধার হয়েছে। এদের মধ্যে মুল চক্রী বেক আসরো নাইজেরিয়ান গাংয়ের সদস্য। শুক্রবার ধৃতদের ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় আনা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.