সন্দীপ চক্রবর্তী: স্মার্ট সিটির প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিল নিউটাউন৷ আর সেই তকমা সরকারিভাবে পেতেই তৈরি হচ্ছে নতুন নিগম৷ নিউটাউন স্মার্ট সিটি কর্পোরেশন-ই স্মার্ট সিটি রূপায়ণে বড় ভূমিকা নেবে৷
তবে স্মার্ট সিটির তকমা অধিকারের লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না৷ সারা দেশে ২৩টি শহর লড়াইয়ে ছিল৷ তার মধ্যে নিউটউন ষষ্ঠ৷ লখনউ, ওয়ারাঙ্গল, ধরমশালা, রাইপুর, ভাগলপুরের পর নিউটাউন৷ দেরাদুনেরও কিন্তু ঠাঁই হয়নি৷ যে দশটি শহর দ্বিতীয় দফার তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেনি, চলতি বছরের জুন মাসের শেষে আবার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে সেই শহরগুলি৷ তখন অবশ্য রাজ্যের বিধাননগর, হলদিয়া, দুর্গাপুরও প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে৷ উল্লেখ্য, চলতি বছরেই আরও সাতটি শহরকে স্মার্ট সিটির তালিকাভুক্ত করবে কেন্দ্রের নগরোন্নয়ন মন্ত্রক৷ প্রথম দফার তালিকায় ২০টি শহর তালিকায় ছিল৷
নিউটাউন স্মার্ট সিটির তালিকাভুক্ত হওয়ায় বছরে ২০০ কোটি টাকা করে আগামী পাঁচবছর মোট এক হাজার কোটি টাকা পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ করতে পারবে৷ এই টাকার অর্ধেক দেবে রাজ্য সরকার৷ শিরোপা আদায়ে বিদায়ী মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পাশাপাশি রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব দেবাশিস সেনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ তিনি জানিয়েছেন, স্মার্ট সিটির জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছিল৷ সেই মতোই কাজ হবে৷ দরপত্রও চাওয়া হবে৷ তবে তার আগে এইসব কাজ করতে একটি নিগম তৈরি করা হবে৷ অর্থ দফতরের কাছে সম্মতিও চাওয়া হয়েছে৷ এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই সম্মতি মিলবে বলে তাঁর আশা৷ কেন্দ্রের টাকা আসবে নিগমে৷ খরচ করতে হবে নিগমের মাধ্যমেই৷ এছাড়াও দেবাশিস সেন বলেছেন, “শুক্রবার বৈঠক ডাকা হয়েছে৷ পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প রিপোর্ট যত দ্রূত সম্ভব পাঠাতে হবে৷ এখনই দু’টি রিপোর্ট তৈরি রয়েছে৷”
পরিকল্পনামাফিক রিপোর্ট তৈরি, দ্রূত সিান্ত ও আধুনিকতার ফলেই কিন্তু নিউটাউন বড় শহরগুলির সঙ্গে লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল৷ নিউটাউন স্মার্ট সিটির তকমা পাওয়ায় খুশি বিধানসভায় সদ্যবিজয়ী সব্যসাচী দত্তও৷ তিনি বলেছেন, “নিউটাউন এমনিতেই এগিয়ে যাচেছ৷ নতুন সরকারের আমলে আরও এগোবে৷ বিধাননগরেরও এই শিরোপা পাওয়া উচিত ছিল৷”
নিউটাউনের পরিকল্পনা | |||||
স্মার্ট ওয়াটার মিটার বসবে৷ কোথাও দূষিত জল যাচ্ছে কি না কম্পিউটারের মাধ্যমে বোঝা যাবে৷ কতজন জল পাচ্ছেন, জানা যাবে৷ | |||||
এমন ফুটপাথ যেখানে হুইল চেয়ারেও কোনও সমস্যা হবে না৷ | |||||
স্মার্ট ইলেকট্রিক মিটার বসবে প্রতি বাড়িতে৷ | |||||
নিরাপদ পরিবহণের পাশাপাশি জীবনযাপনের গুণমান বৃদ্ধি৷ | |||||
পাঁচ বছরে কেন্দ্র দেবে পাঁচশো ও রাজ্য দেবে পাঁচশো কোটি টাকা৷ |
প্রথম বছরে ‘স্মার্ট ওয়াটার মিটার’-এর পরিকল্পনা রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি নিরাপদ জল পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য৷ কোথাও দূষিত জল ঢুকছে কি না বা কতজন জল পাচ্ছেন, সবটাই কম্পিউটারের মাধ্যমে জানা যাবে৷ এছাড়া জীবনযাত্রার গুণমান বাড়াতেও একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে এনকেডিএ ও নগরোন্ন্য়ন দফতর৷ কেমন সেই পরিকল্পনা? হুইল চেয়ারের সুবিধাযুক্ত ফুটপাথের মতো অনন্য পরিকল্পনা রয়েছে৷ নিরাপদ পরিবহণকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে৷ এছাড়া স্মার্ট ইলেকট্রিক মিটার রাখা হবে৷ বিদ্যুতের বিন্দুমাত্র সমস্যা দূর করতে থাকবে ইলেকট্রিক হেল্প সেণ্টার৷ নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক উন্নয়নেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ এই সব পরিকল্পনা ধাপে ধাপে সফল করে তুলতে এখন থেকেই কাজে লেগে পড়তে চান আধিকারিকরা৷
এমনিতে নিরবচিছন্ন জল ও বিদ্যুত সংযোগ, শৌচালয়, পরিবহণ, তথ্যপ্রযুক্তি সংযোগ, ই-গর্ভন্যান্সের সুবিধা দেওয়ার কথা স্মার্ট সিটিতে৷ সেই দিক থেকে কিন্তু নিউটাউন আগেই সেইসব চাহিদা পূরণ করেছে৷ তথ্যপ্রযুক্তি সংযোগের দিক থেকে দেশের যে কোনও আধুনিক শহরের সঙ্গেই পাল্লা দিতে পারে৷ ই-গর্ভন্যান্সের ক্ষেত্রেও রাজ্য অন্যতম সেরা৷ সূত্রে খবর, পরিবহণের ক্ষেত্রেও আরও আধুনিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে৷ পর্যাপ্ত এসি বাস রয়েছে৷ বাড়ানো হতে পারে ব্যাটারিচালিত ও রাত্রিকালীন বাস পরিষেবা৷
অভিনব ও আধুনিকতম ব্যবস্থা নিয়ে দেশের সেরার তকমা ছিনিয়ে নিতেই যেন তৈরি হচ্ছে নিউটাউন৷ একই পথে এগোচ্ছে বিধাননগর, দুর্গাপুর ও হলদিয়াও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.