অর্ণব আইচ: স্বামী–স্ত্রী পরিচয় দিয়ে দু’দিন আগেই ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন এক যুগল। মঙ্গলবার দুপুরে ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হল তাঁদেরই ঝুলন্ত দেহ। ঘটনাটি ঘটেছে পর্ণশ্রী (Parnasree) থানা এলাকার বেচারাম চ্যাটার্জি রোডে। পুলিশের ধারণা, দুজনের পরিবারই তাঁদের এই সম্পর্ককে মেনে নেয়নি। এ ছাড়াও ছিল অর্থনৈতিক সমস্যা। এই অবসাদ থেকে দু’জনে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত যুবকের নাম রাজু মণ্ডল (২৯)। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ শহরতলির জোকার জায়গির ঘাটে। মৃত যুবতীর নাম রিংকি মণ্ডল (২০)। তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির বাসিন্দা।
জানা গিয়েছে, বেচারাম চ্যাটার্জি রোডের বাসিন্দা রতন চক্রবর্তী ও কল্পনা চক্রবর্তীর বেশ কয়েক ঘর ভাড়াটে রয়েছে। একটি ঘর ফাঁকা ছিল। তাতে তিনি ভাড়াটে বসাতে চেয়েছিলেন। ওই পাড়ারই এক ব্যক্তির সঙ্গে রাজুর যোগাযোগ হয়। গত রবিবার ওই ব্যক্তি যুগলকে নিয়ে রতনবাবুর কাছে আসেন। আগাম হাজার টাকা নেন তিনি। মাসে হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তি হয়। রতনবাবু পুলিশকে জানান, ওই যুগলের কাছে রান্নার বিশেষ কোনও সরঞ্জামও ছিল না। যে ব্যক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছিল, তিনিই যুগলকে প্রত্যেকদিন দু’বেলা খাবার সরবরাহ করতেন। পরবর্তীকালে তাঁরা রান্নার ব্যবস্থা করবেন, বাড়িওয়ালাকে এমনই জানান।
এদিকে, এদিন সকাল থেকেই ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। দু’জনেরই কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রথমে বাড়িওয়ালা বিষয়টিকে আমল দেননি। কিন্তু দুপুর বারোটা নাগাদ ওই ব্যক্তি রাজু ও রিংকিকে খাবার দিতে আসেন। বারবার দরজায় ধাক্কা দেওয়ার পরেও কেউ দরজা না খোলায় বাড়িওয়ালা–সহ প্রত্যেকেরই সন্দেহ হয়। ঘরের জানালা দিয়ে ভিতরে তাকাতেই দেখা যায়, ঘরের সিলিং থেকে গলায় একই শাড়ির ফাঁস দিয়ে একসঙ্গে ঝুলছেন ওই যুবক–যুবতী। সঙ্গে সঙ্গেই পর্ণশ্রী থানার খবর যায়। পুলিশ এসে দেহ দু’টি উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। দু’টি দেহই ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের ধারণা, বাড়িওয়ালা ওই ব্যক্তি পুলিশকে আরও জানান, ওই যুবক নিজেকে একটি বেসরকারি কর্মচারী সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। অন্যদিকে যুবতী জানিয়েছিলেন, গত কয়েক বছর ধরেই তাঁরা একে–অপরকে ভালবাসেন। সম্প্রতি তাঁরা বিয়ে করেন। কিন্তু সম্পর্ক দুই বাড়ি থেকে মেনে নেয়নি। বাড়িওয়ালা জানান, তাঁদের কাছে সংসার চালানোর মতো অন্য কোনও কিছু ছিল না বললেই চলে। বরং তিনি নিজেই যুগলকে একটি চৌকি দেন। সোমবার রাতে কয়েকজন প্রতিবেশী আবার ঝগড়াঝাঁটির আওয়াজও শোনেন।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, ভোরবেলায় দু’জনে আত্মহত্যা করেছেন ওই যুগল। বাড়ি থেকে চলে এলেও আসলে যুগলের অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল। দুজনেরই জীবনযাপন করার মত প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব ছিল। এছাড়াও পুলিশের ধারণা, ওই যুবতীকে বাড়ি ফেরার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাঁরা বিয়ের কথা জানালেও দুজনের বাড়ি থেকে ওই সম্পর্ক মেনে নেওয়া হয়নি। এরপরই তাঁরা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। দু’জনের বাড়িতে কারা কারা আছেন, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে উভয়ের বাড়ির পরিবারের লোককে খবর দেওয়া হয়। পরিবারের লোকদের জেরা করে এই জোড়া আত্মহত্যার রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.