ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ওজনে ফাঁকি ধরতে আরেক ‘ওজনযন্ত্র’। তবে হাতে-কলমের ওজনযন্ত্র নয়। পুরোটাই বৈদ্যুতিন। ডিসেম্বর থেকেই সেই ফাঁকি ধরার ওজনযন্ত্র সক্রিয় করে দেওয়া হবে সমস্ত রেশন দোকানে। পোশাকি নাম ‘ওয়েয়িং স্কেল’। এখনও পর্যন্ত যা খবর ২০ হাজারের মধ্যে ১৮ হাজার রেশন দোকানে সেই যন্ত্র বসিয়ে দিয়েছে খাদ্যদপ্তর। অনুমান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সব দোকানে সেই যন্ত্র ইনস্টলের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তার পরই তাদের সক্রিয় করে দেওয়া হবে।
চলতি বছর থেকেই আইরিশ স্ক্যানারে গ্রাহকের পরিচয় যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে রেশন দোকানগুলিতে। রেশন তোলার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিকের প্রয়োজনে আধার কার্ড নম্বর আপডেট করার পাশাপাশি হাতের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে খাদ্যদপ্তর। তাতেও সমস্যা মিটছিল না। হাতের আঙুলের ছাপ না মেলাতে পারায় গ্রাহকের পরিচিতি নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। তার পরই চোখের মণি মিলিয়ে দেখার জন্য আইরিশ স্ক্যানার পদ্ধতি আসে রেশন দোকানে। বছরের শুরুর দিকেই সেই পদ্ধতিতে গ্রাহকের পরিচিতি মিলিয়ে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আগামিদিনে ‘ওয়েয়িং স্কেল’-কে সামনে আনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। পুজোর আগে থেকে রাজ্যজুড়ে সেই কাজ শুরু হয়। গ্রাহকপিছু বরাদ্দ আর আর গ্রাহক কত রেশন পাচ্ছেন এই হিসাব নিখুঁতভাবে মেলাতেই ওয়েয়িং স্কেলের ব্যবহার শুরু করতে চলেছে খাদ্য দপ্তর।
বহু রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে নানা সময় অভিযোগ ওঠে রেশনে কারচুপির। বরাদ্দ অনুযায়ী রেশন মিলছে না বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। খাদ্যদপ্তরের পোর্টাল থেকে বরাদ্দের হিসাব দেখিয়ে মাসের প্রথমে বার্তা যায় গ্রাহকের ফোনে। গ্রাহক রেশন তুলতে গেলে নানা সময়ই তাঁদের ওজনে কম দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকী, খাদ্যদপ্তরের পাঠানো রেশনে সামগ্রীর টানাটানি রয়েছে বলে জানিয়েই গ্রাহকদের বরাদ্দের চেয়ে কম পরিমাণে তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। শুধু তাই না, সামগ্রী পরিমাণে কম দিয়েও পোর্টালে গ্রাহকের বরাদ্দমতোই তা বিলি হয়েছে বলে জানানো হয়। সেই বার্তা খাদ্যদপ্তরের তরফ থেকে আবার গ্রাহকদেরও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সার্বিকভাবে এ নিয়ে ক্ষোভও কম থাকে না গ্রাহকদের। এই প্রেক্ষিতেই ‘ওয়েয়িং স্কেল’-এর ব্যবহার শুরু হতে চলেছে রেশন দোকানগুলিতে। গ্রাহকের নামে বরাদ্দ রেশন নিখুঁতভাবে ওজন যন্ত্রে না তোলা পর্যন্ত ‘ওয়েয়িং স্কেল’ তার হিসাব মেলাতে পারবে না। ফলে রেশন বণ্টন প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হবে না।
যদিও গ্রাহক ক্ষোভের জন্য কিছু অংশে গ্রাহকরাও দায়ী বলে মনে করেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। তাঁর কথায়, “গ্রাহকদের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাঁদের উচিত রেশন দোকানে দাঁড়িয়েই তার প্রতিবাদ করা। তার জন্য দপ্তর যা বরাদ্দ করছে, তিনি তার কম নেবেন কেন?” তবে গ্রাহকদের এই অসন্তোষের কথা যে সত্যি, তা সাম্প্রতিক বেশ কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগের আকারে সামনেও এসেছে। সরবরাহকারীদের তরফ থেকেই সেখানে কারচুপি করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগও তুলেছিলেন ডিলাররা। এই পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে ‘ওয়েয়িং স্কেল’-এর ব্যবহার চালু করতে চাইছে খাদ্যদপ্তর। যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে রেশন নিয়ে গ্রাহক-ক্ষোভ অনেকটাই সামলানো যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.