অভিরূপ দাস: জেনারেটরের মতো কাঁপত শরীর। জলের গ্লাস ধরে রাখতে পারতেন না হাতে। চেটো থেকে প্লেট ছিটকে পড়ে যেত মাটিতে। বিদ্যুতের খেলা থামাল কাঁপুনি। দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। আর কলকাতায় হল পূর্ব ভারতের (East India) প্রথম। সারা মাথা জুড়ে নয়, বিদ্যুৎ খেলল বিশেষ গতিপথে। এবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই সারানো যাবে পারকিনসন্স। স্নায়ুর (Nerve) এই রোগে হাত পায়ে দেখা যায় অনিচ্ছাকৃত কম্পন। জলের গ্লাসও ধরে রাখা যায় না। কথা বলার সময় কথা জড়িয়ে যায়।
যেমনটা হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) বাসিন্দা তপস্যা ঘোষের। বালিগঞ্জের বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির তপস্যা ঘোষ এসেছিলেন ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেসে (INK)। ভর্তি হয়েছিলেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যাকি গঙ্গোপাধ্যায়ের অধীনে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় পার্কিনসন্স। তারপর যতদিন যায় ওষুধ আর কাজ করে না। মোটর ফ্লাকচুয়েশন শুরু হয়। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায় পারকিনসন্স। তখন মুক্তির একমাত্র পথ ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন। এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের মধ্যে সাবথেলামিক নিউক্লিয়াস অংশে পেসমেকারের মতো যন্ত্র বসানো হয়। এরপর বিদ্যুৎ তরঙ্গ (Electronic wave)পাঠিয়ে মাথার অকেজো স্নায়ুকে সজাগ করা হয়। এতদিন ৩৬০ ডিগ্রিতে পাঠানো হত সেই বিদ্যুৎ তরঙ্গ।
নিউরো সার্জন ডা. অমিতকুমার ঘোষ পূর্ব ভারতে প্রথম তা করলেন ‘ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন উইথ ডাইরেকশনাল লিড।’ ডা. অমিতকুমার ঘোষের কথায়, এতদিন মস্তিষ্কের মধ্যে ইলেকট্রিক তরঙ্গের মাধ্যমে অকেজো নার্ভকে সচল করা হত। বিদ্যুতের তরঙ্গ কমিয়ে বাড়িয়ে দেখা হত কোন মাত্রায় রোগী যথাযথ সাড়া দিচ্ছে। সমস্যা ছিল একটাই। ৩৬০ ডিগ্রিতে বিদ্যুৎটা ছড়িয়ে পড়ত।
এদিকে মাথার সমস্ত নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু ৩৬০ ডিগ্রিতে ছড়িয়ে পড়ার ফলে সুস্থ নার্ভেও ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন পৌঁছে যেত। এর ফলে দেখা দিত নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। এই প্রথম তা হল ডাইরেকশনাল লিডের মাধ্যমে। এবার আর সারা মস্তিষ্কে নয়। শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত নার্ভকেই জাগিয়ে তুলবে ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন। ডা. অমিতকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, রোগী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.