অর্ণব আইচ: আরুপোতার বৃদ্ধা খুনের মোটিভ কী? এখনও সে বিষয়েই নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্তকারীরা। যদিও মেয়ের উপর অত্যাচারের কারণেই খুনের তথ্য মানতে নারাজ তাঁরা। সেই সঙ্গে প্রকাশ্যে এসেছে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধৃতরা জানিয়েছে, তাঁদের বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন সুজামণি। সেই কারণেই নাকি খুন! তবে এ তথ্য আদৌ কতটা সত্যি, তা নিয়ে সন্দিহান পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ নিশ্চিত, পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে ওই বৃদ্ধাকে। শুক্রবার পূর্ব কলকাতার (Kolkata) আরুপোতায় বৃদ্ধা সুজামনিকে বাড়ির মধ্যে খুন করে তার বেয়াই বাসু মণ্ডল, বেয়ান মলিনা ও মলিনার ভাই অজয় রং। খুন করে ট্যাক্সিতে করে সবজির বস্তার আড়ালে দেহটি পাচার করার আগেই সন্দেহের বশে বাইকে টহলরত পুলিশকর্মীরা গাড়িটি আটকান। ট্যাক্সির ডিকি খুলতেই বেরিয়ে পড়ে সবজির বস্তায় লুকানো বৃদ্ধার রক্তাক্ত দেহ। প্রথমে জেরার মুখে খুনের মূল অভিযুক্ত বাসু ও স্ত্রী মলিনা পুলিশকে জানায়, তাঁদের মেয়ের উপর অত্যাচার করতেন শাশুড়ি সুজামণি। সেই শোধ তুলতেই এই খুন। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, হরিদেবপুরের কবরডাঙার বাসিন্দা খোকনের সঙ্গে সুজাতার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২৫ বছর আগে। ওই দম্পতির এক ছেলে দ্বাদশ শ্রেণী ও অন্য ছেলে দশম শ্রেণীতে পড়ে। এত বছর পর মেয়ের উপর অত্যাচারের বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়। তখন প্রসঙ্গ পালটে মলিনা বলে, সে একটি জমি কিনেছে তার বাড়ির কাছেই। সেখানে তারা বাড়ি তৈরি করছে। ওই বাড়িতে সুজামনি থাকার জন্য জোর করছিলেন। সেই কারণেই তাঁকে খুন।
এই যুক্তি নিয়েও ধন্দে পুলিশ। সুজামণি নিজে কোনও জমি কিনে ছিলেন কি না, পুলিশ তার খোঁজ করছে। সেই জমি দখলের চেষ্টায় কি খুন? এই প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশ আধিকারিকরা। তবে খুন যে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা মোড়ে করা হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই পুলিশের। লেক মার্কেট অঞ্চলে ফুল বিক্রি করতেন সুজামণি। জানা গিয়েছে, মলিনা সুজামণিকে গিয়ে বলে, তাঁকে নিয়ে যেতে এসেছে সে। বাড়িতে একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া হবে বলে জানায় মলিনা। বেয়াইয়ের বাড়ি যেতে রাজি হয়ে যায় যান সুজামনি। সকাল থেকে মলিনা রান্নাবান্না করেই রেখেছিল। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বিকেল নাগাদ বাসু মণ্ডল তাঁর মাথায় হঠাৎই লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এরপর শ্বাসরোধ হয় খুন করা হয় বৃদ্ধাকে। খুনের পর সবজির বস্তার মধ্যে দেহটি রেখে দেয় তারা। প্রায় ১২ ঘন্টা দেহটি ওই অবস্থায় থাকে। এর মধ্যেই তারা পরিকল্পনা করে সবজির বস্তার আড়ালে দেহটি বাসন্তী হাইওয়ের পাশের খালে ফেলে দেওয়ার। তার জন্য ট্যাক্সিটিকে বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরায়। পুলিশ খুনের কারণ জানতে ধৃত দম্পতিকে আলাদাভাবে ও মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করছে। তাদের জেরায় বহু অসঙ্গতি উঠে এসেছে। দম্পতির মেয়ে ও জামাইকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.