কৃষ্ণকুমার দাস: কলকাতা পুরসভার ডেথ রেজিস্টারে কাশীপুর থানায় নথিভুক্ত মৃত্যুর কারণ প্রকাশ্যে আসতেই বৃহস্পতিবার নতুন বিতর্ক শুরু হল। কারণ, এতদিন ধরে ঠাকুরের ভক্ত ও অনুগামীদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা ছিল দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর সাধক শ্রীরামকৃষ্ণ গলায় ক্যানসারে মারা গিয়েছেন। কিন্তু ঠাকুরের মৃত্যুর পর শ্মশানে দাহের আগে কাশীপুর থানায় অনুগামীদের তরফে যে রেজিস্টেশন হয় সেখানে মৃতু্যর কারণ হিসাবে ‘গলায় আলসার’ লেখা আছে। কাল শনিবার সকাল ১১টায় বেলুড় মঠে এই নথি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কতৃর্পক্ষের হাতে তুলে দেবেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ।
১৮৮৬ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে পরমপুরুষ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মাত্র ৫২ বছর বয়সে কাশীপুর উদ্যানবাটিতে মারা যান। শেষকৃত্য হয় কাশীপুর শ্মশানেই। সেই সময় এখনকার মতো দেহ শেষকৃত্য করতে নিয়ে এলে শ্মশানে পুরসভার তরফে নথিভুক্ত করা হত না। কিন্তু ব্রিটিশরা আইন করে সমস্ত শেষকৃত্যের তথ্য থানায় রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রাখতেন। সেই মতো ঠাকুরের শবদাহের আগে কাশীপুর থানায় মৃত্যু খবর নথিভুক্ত করান অনুগামীরা। সেখানে লেখা হয় ঠাকুরের আসল নাম, গদাধর চট্টোপাধ্যায়। পেশায় পুরোহিত।
কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানান, “যেহেতু মধ্যরাতে মৃত্যু হয়েছিল ঠাকুরের, তাই ইংরেজি নিয়মে ১৬ আগস্ট নথিভুক্ত হয় কাশীপুর থানায়। পরে থানার কাছ থেকে সেই রেজিস্টার এনে কলকাতা পুরসভার সংরক্ষণ করা হয়।” পুরসভার আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, ১৯০০ সালের আগে ভারতে ক্যানসার নিয়ে আলোচনাই হত না। তাই ১৮৮৬ সালে ঠাকুরের মৃত্যুর কারণ গলায় ক্যানসার না লিখে ‘আলসার’ লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন পরমংহসের চিকিৎসকরা। যদিও এই ব্যাখ্যা সবাই মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা দাবি, আলসারের যথেষ্ট চিকিৎসা না থাকায় ঠাকুরের অকালমৃত্যুর হয়েছে। কারণ, ১৮৬৬ সালে ভারতে চিকিৎসা করতে আসা ইংরেজ চিকিৎসক এলেমসিলি প্রথম দাবি করেছিলেন, ৩০ জনের শরীরে ক্যানসারের লক্ষণ পেয়েছি। আসলে তখন ধারণা ছিল, ক্যানসার শুধুমাত্র বিদেশি, সাদা চামড়ার মানুষের হয়।
বেলুড় মঠ কতৃর্পক্ষ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে নিয়ে একটি আর্কাইভ তৈরি করছে। তাই কলকাতা পুরসভার কাছে ঠাকুরের ডেথ সার্টিফিকেট নথি চেয়ে পাঠায় মঠ ও মিশন। কিন্তু সরকারি নিয়মে এই নথি দেওয়ায় আইনত বাধা রয়েছে। ডেপুটি মেয়রের ব্যাখ্যা,“কাশীপুর থানা থেকে সংগ্রহ করা মূল রেজিস্ট্রেশন খাতা যেহেতু সরকারি সম্পত্তি তাই এটি দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ওই খাতার ডিজিটাল রেপ্লিকা তৈরি করে হুবহু বেলুড়ে মঠ ও মিশনকে তুলে দেওয়া হচ্ছে।” বেলুড় মঠের হাতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর তথ্য সম্বলিত ডিজিটাল রেপ্লিকা তুলে দিতে পেরে কলকাতা পুরসভার তরফে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ডেপুটি মেয়র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.