ছবি: প্রতীকী।
দীপঙ্কর মণ্ডল: এতদিনকার পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ বিপরীতে হাঁটতে হবে এবার। সুপ্রিম রায় মেনে প্রত্যেকটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়কে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা নিতে হবে। অনলাইন হোক বা অফলাইনে, পরীক্ষার মাধ্যমেই সার্টিফিকেট পাবেন পড়ুয়ারা। এই অবস্থায় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, যতটা সম্ভব কম অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হোক। তবে তা সেপ্টেম্বরে নয়, অক্টোবরে, পুজোর আগে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিন্তার মূল কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে পরীক্ষা পদ্ধতি। কীভাবে এত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেওয়া হবে? কোভিড পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপত্তা এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় বাস্তবায়িত করতে এই মূহর্তে একটি পদ্ধতির কথাই ভাবছে অভিজ্ঞ মহল – ওপেন বুক এক্সাম (Open Book Exam)।
আপাতভাবে এই পদ্ধতি নতুন বলে মনে হলেও, এ দেশে তা অপরিচিত নয় মোটেও। এর আগে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কম নম্বরের মূল্যায়ণের জন্য এই ‘ওপেন বুক সিস্টেম’ বা ‘ওপেন বুক এক্সাম’ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল। সোজা বাংলায় যা বই খুলে পরীক্ষা দেওয়া। অর্থাৎ প্রশ্নপত্র মেল বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার্থী লিখে ফের মূল্যায়ণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। বাড়িতে বসেই পরীক্ষা দিতে পারবেন সকলে। ‘হোম অ্যাসেসমেন্ট’ হওয়ায় পরীক্ষার্থীরা বই দেখে বা অন্যের সাহায্য নিয়েও উত্তর লিখবেন, তা জেনেই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। প্রত্যন্ত যেসব এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা অপ্রতুল, সেখানে একটি সেন্টারে নেট সংযোগ করে কয়েকজনের পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। যার খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার অথবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটাই পরীক্ষা গ্রহণের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি বলে মনে করছে শিক্ষামহলের একটা বড় অংশ।
এ নিয়ে তৃণমূলপন্থী অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু বলেন, ”রাজ্য সরকারকে আমরা প্রস্তাব দেব যে ওপেন বুক সিস্টেমে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য UGC’র কাছে আবেদন জানাতে। এই পদ্ধতিতে UGC’রও আপত্তি ওঠার কথা নয়। এই মুহূর্তে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিতে হলে এটাই একটা উপায়।” বই খুলে পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি পশ্চিমবঙ্গেও একেবারে নতুন, তা কিন্তু নয়। বছর দশেক আগে শিবপুর IIESTতে (তৎকালীন BESU) খুব কম নম্বরের পরীক্ষা হয়েছিল এই পদ্ধতিতে। তৎকালীন উপাচার্য অজয় কুমার রায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল এই মূল্য়ায়ণ পদ্ধতি। এছাড়া রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দপ্তরও এভাবে বাড়িতে প্রশ্ন পাঠিয়ে অথবা পরীক্ষার্থীদের ফোনে প্রশ্ন করে পরীক্ষা নিয়েছে। যার নাম দেওয়া হয় ‘হোম অ্যাসেসমেন্ট’। এও এক মূল্যায়ণ পদ্ধতি।
পাশ্চাত্য দেশগুলিতে উচ্চশিক্ষায় এই পদ্ধতি সুপরিচিত। আসলে, শিক্ষামহলের একাংশের যুক্তি, বিষয়ের উপর নির্দিষ্ট মাত্রায় দখল না থাকলে বই দেখেও কোনও পডুয়া সঠিক উত্তর দিতে পারবে না। কারণ, উচ্চশিক্ষায় বিষয়ের উপর স্বচ্ছ ধারণা রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই বই দেখে উত্তর লেখা হলেও, তা বিভিন্ন পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হবে। পরীক্ষকরা তার মূল্যায়ণও করতে পারবেন। তাহলে কোভিড পরিস্থিতিতে কি এভাবেই পালটে যাবে দেশের পরীক্ষা পদ্ধতি? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আরও খানিকটা সময়ের অপেক্ষা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.