দীপঙ্কর মণ্ডল: অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘নো ডিটেনশন’ চালু আছে। বোঝার সুবিধার্থে বলা হয় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল পদ্ধতি উঠে গিয়েছে। শিক্ষার অধিকার আইনে কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশে এই নিয়ম চালু করেছিল। যা নিয়ে বিতর্ক কম নেই। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বহু রাজ্য স্কুলস্তরে পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম মেনে এবার স্নাতকেও চালু হচ্ছে ‘নো ডিটেনশন’। অর্থাৎ বিএ, বিএসসি এবং বিকম-এ ফেল করা ছাত্র বা ছাত্রীদের আর একই ক্লাসে রাখা হবে না। এবার এমন অভিনব সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছর থেকেই নয়া নিয়ম চালু হবে। অনুত্তীর্ণ পড়ুয়াকে পাঁচ বছর সময় দেওয়া হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে ফেল করা বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করলে স্নাতকের শংসাপত্র দেওয়া হবে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ফেল করা পড়ুয়ারা কয়েকমাস আগে টানা বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। নিয়ম বদলে তাদের একটি বড় অংশকে পাস করানো হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করছে, পরীক্ষায় পাসের দাবিতে বিক্ষোভের ছবি আর দেখা যাবে না। কারণ, স্নাতকে নয়া পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হচ্ছে। নয়া পদ্ধতির নাম ‘চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’ (সিবিসিএস)। উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “সিবিসিএস নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মত নেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক ও কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলার পরই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এদিনই নয়া সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। উপাচার্য জানিয়েছেন, ১২ মে একটি কর্মশালার মাধ্যমে সবাইকে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
স্নাতকে এখন পার্ট ওয়ান, পার্ট টু ও পার্ট থ্রি, মোট তিনটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। নয়া ব্যবস্থায় আমূল বদল বদল আসছে। তিন বছরে মোট ছ’টি সেমেস্টারে পরীক্ষা হবে। প্রত্যেকটি সেমেস্টারের মেয়াদ হবে ১৫ থেকে ১৮ সপ্তাহ। কলেজে উপস্থিতির জন্য দশ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার জন্যও থাকবে ১০ নম্বর। বিজ্ঞানের বিষয়গুলির জন্য প্র্যাকটিক্যাল হবে ৩০ নম্বরের। বাকি ৫০ নম্বরের থিওরি পরীক্ষা হবে। কলা এবং বাণিজ্য শাখাতেও প্র্যাকটিক্যালের ব্যবস্থা থাকবে। এই বিষয়ে ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। ‘নন ল্যাব বেসড’ বিষয়গুলির প্র্যাকটিক্যালের পোশাকি নাম ‘টিউটোরিয়াল’। কলা এবং বাণিজ্য শাখার বিষয়গুলিতে থিওরির পরীক্ষা হবে ৬৫ নম্বরের। মার্কশিটে নম্বরের বদলে গ্রেডেশন থাকবে। উপাচার্য জানিয়েছেন, “নয়া ব্যবস্থায় রি-এক্সামিনেশন ব্যবস্থা থাকছে। অর্থাৎ কোনও ছাত্র বা ছাত্রী চাইলে তাঁর খাতা ফের দেখা হবে। একইসঙ্গে ‘আপগ্রেডেশন’ ব্যবস্থাও থাকবে। এই ব্যবস্থায় কেউ নম্বর বাড়াতে চাইলে ফের পরীক্ষাও দিতে পারবেন।”
এদিকে কলেজগুলির হাত থেকে স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়ে নিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতার বহু কলেজেই স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। পরীক্ষা ব্যবস্থা এতদিন নির্দিষ্ট কলেজগুলির হাতেই ছিল। সিলেবাস তৈরি থেকে খাতা দেখা, সবই করত কলেজ। অনেক সময় দেখা যেত, একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের তুলনায় কলেজের পড়ুয়ারা বেশি নম্বর পেয়েছেন। এই বৈষম্য দূর করতে শনিবার নয়া সিদ্ধান্ত নিল সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সিন্ডিকেট। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার থেকে আর স্নাতকোত্তরের পরীক্ষার দায়িত্ব কলেজের হাতে থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গেই কলেজে এমএ, এমএসসি বা এমকম পড়ুয়াদের পরীক্ষা হবে। স্নাতকোত্তরের সিলেবাসও আর কলেজ ঠিক করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসই অনুসরণ করতে হবে কলেজগুলিকে। সোমবার উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সাতটি বিভাগের ডিনদের এই বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.