নব্যেন্দু হাজরা: আর ঝক্কি নয়। এবার মেট্রো চেপেই পৌঁছে যাওয়া যাবে দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী মায়ের মন্দিরে। পুজোর আগেই জুড়তে চলেছে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো। কলকাতা মেট্রো রেল সূত্রে এমনটাই খবর মিলেছে। জানা যাচ্ছে, সব ঠিকঠাক থাকলে গান্ধীজয়ন্তীর দিন দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো চালু করে দেওয়া হতে পারে। আগামী মাসেই ওই রুটে ট্রায়াল রান শুরু হবে। তারপর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পেলেই চালু করে দেওয়া হবে রুটটি।
অতএব এবার কালীপুজোয় মা ভবতারিণীর মন্দিরে পুজো দিতে চাইলে মেট্রোয় চেপে বসলেই হল। নিউ গড়িয়া থেকে মাত্র এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যাবে দক্ষিণেশ্বরে। সন্ধ্যারতি থেকে সকালের মাতৃবন্দনা, যানজটের কারণে আর কোনওটাই মিস হবে না। নাটমন্দিরের চাতালে বসে মন ভরে ভবতারিণীর সেবা করে আবার নির্বিঘ্নে গন্তব্যে ফিরে আসা যাবে খুব কম সময়ে।
রেলমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় দফায় বাজেট পেশ করতে গিয়ে অন্য প্রকল্পের চেয়ে মা ভবতারিণীর মন্দিরে যাওয়ার জন্য এই বিশেষ মেট্রো রুটের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করেন মমতা। বস্তুত, তাঁরই বিশেষ নজরদারিতে এই প্রকল্প গতি পায়। এছাড়াও দক্ষিণেশ্বর স্টেশন থেকে স্কাইওয়াক তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সেই মমতাই। স্বভাবতই মা ভবতারিণীর ভক্তদের জন্য মেট্রো চালু হওয়া পুজোর মুখে অবশ্যই সুখবর বয়ে আনবে।
মেট্রো রেলের তরফে জানা গিয়েছে, দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে বাকি কাজ হয়ে যাওয়ার কথা। তারপরই ট্রায়াল রান শুরু হবে। এবং ট্রায়াল রান সফল হলে তারপরই কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির কাছে চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেতে আবেদন জানাবে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কলকাতা মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রানী বন্দে্যাপাধ্যায় বলেন, “দ্রুতগতিতে কাজ হচ্ছে। আশা করছি পুজোর আগেই ওই অংশে মেট্রো চলাচল চালু হয়ে যাবে।”
নিউ গড়িয়ার কবি সুভাষ থেকে নোয়াপাড়া। এখন মেট্রোর এটাই রুট। নোয়াপাড়ার পর এবার যুক্ত হবে আরও দুটি স্টেশন। বরানগর আর দক্ষিণেশ্বর। নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর এই অংশের মোট দূরত্ব ৪.১ কিলোমিটার। মাঝে পড়বে বরানগর স্টেশন। দক্ষিণেশ্বর স্টেশনটি পুরোপুরি মন্দিরের ধাঁচে তৈরি করা হয়েছে। স্টেশনটি দেখলে মনে হবে মূল মন্দিরের রেপ্লেকা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এই তীর্থক্ষেত্রের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বয়স্ক মানুষ থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য লিফট ও হুইল চেয়ারের মতো পরিষেবা রাখা থাকছে। স্টেশন থেকেই সোজা মায়ের মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
জানা যাচ্ছে, দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত রেক চলাচল নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই প্রচুর রেক চলে আসবে। তবে দক্ষিণেশ্বরে আপাতত কোনও কারশেড তৈরি হচ্ছে না। নোয়াপাড়াতেই রেক থাকবে। সেখান থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত তা চালানো হবে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যেহেতু এটি একটি বর্ধিত প্রকল্প তাই ট্রায়াল রানের পর কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির কাছে ছাড়পত্র পেতে বিশেষ সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আপাতত নোয়াপাড়ার দিক থেকে লাইন জোড়ার কাজ চলছে। দক্ষিণেশ্বরের দিকে লাইন পাতার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে।
তবে টালা ব্রিজ ভাঙার কাজ চলায় সমাণ্য অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসেই ৩০ জনের একটি বিশেষজ্ঞ লাইন পাতার কাজ পরিদর্শন করেছিল। কাজের গতিপ্রকৃতি দেখে তরা তখনই একপ্রস্থ সন্তোষ প্রকাশ করেন ও জানান, এই রুটে মেট্রো চালুর পথে কোনও বাধা নেই। ২০০৯ সালে এই বর্ধিত প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর নানা টালবাহানায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। এরপর ২০১৭ থেকে ফের কাজে অগ্রগতি শুরু হয়। এবার সিদ্ধান্ত হয়েছে পুজোর আগেই রেক চালু করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.