Advertisement
Advertisement
মেট্রো

নিরাপত্তার গলদ থাকায় মেলেনি সংকেত, ‘মেধা’র নিম্ন মেধা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

পাতালে ছুটছে ত্রুটিপূর্ণ রেকই।

New Kolkata Metro 'Medha' rake under scanner after mishap

ফাইল ছবি

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:July 15, 2019 12:19 pm
  • Updated:July 15, 2019 7:22 pm  

নব্যেন্দু হাজরা: রেক দেখেই ভুরু কুঁচকেছিলেন এখানকার মেট্রো কর্তারা। ‘এখানে তো হাজার ত্রুটি।’ তাই কলকাতা মেট্রোর ট্রেন এগজামিনার বা টিএক্সআরদের সবুজ সংকেত পায়নি মেধা। তবু আইসিএফে তৈরি করা এই রেক রেলবোর্ড কার্যত চাপিয়ে দিয়েছিল মেট্রোকে। ট্রেন দু’বছর ট্রায়াল রান করে যাওয়ার পর চলা শুরু করেছিল যাত্রী নিয়ে। একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কারণ কলকাতা মেট্রোয় রেকের আকাল। ত্রুটিমুক্ত না করেই যাত্রী নিয়ে ছুটছিল সে। আর সেই ত্রুটিপূর্ণ রেকই কাল হল শনিবার সন্ধেয়। সেন্সর কাজ না করাতেই দরজায় হাত আটকানো সত্ত্বেও কোনও সংকেত পেলেন না মোটরম্যান। ছোটানো শুরু করলেন গাড়ি। তাতেই ঘটল দুর্ঘটনা।

কিন্তু ত্রুটি সত্ত্বেও কেন নামানো হল এই রেক? মেট্রোসূত্রে খবর, মোট পাঁচটি রেক আইসিএফ থেকে এলেও তিনটি রেক ত্রুটির কারণেই ফেরত পাঠানো হয়েছে চেন্নাইয়ে। বাকি দুটি ট্রেন এখনও যাত্রী নিয়ে ছোটে। যার একটিতেই ঘটল দুর্ঘটনা। এই ট্রেনের দেখভালের দায়িত্বও পালন করে মেধা সংস্থা। আইসিএফ শুধু কোচ বানায়। বাকি যাবতীয় টেকনিক্যাল কাজ করে মেধা। এক আধিকারিকের কথায়, রেকে ত্রুটি ধরা পড়ায় মেধা সংস্থা জানায়, রেক চলার সময় তাঁদের লোক থাকবে। প্রথম প্রথম মোটরম্যানের সঙ্গে থাকতেনও। কিন্তু তারপর সেই প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়ে। সূত্রের খবর, এই ট্রেন চলার পরও প্রচুর সমস্যা বেরিয়েছে। যা হওয়ার কথা নয়। তখন ট্রেন ফেরত পাঠাতেও চেয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তিতিবিরক্ত মেট্রো কর্তারা একপ্রকার বাধ্য হয়েই ভিড় সামাল দিতে এই ট্রেনই রেখে দিয়েছেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: অনাস্থার মাঝেই আরও বিপাকে সব্যসাচী দত্ত, আইনি নোটিস ধরালেন কাউন্সিলরের স্ত্রী]

যেমন দিনকয়েক আগেই ফিউজে গন্ডগোলের কারণে সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত বন্ধ ছিল মেট্রো চলাচল। মেট্রোর এক কর্তার কথায়, এই দুর্ঘটনার জন্য কোনওভাবেই রক্ষণাবেক্ষণকে দায়ী করা যায় না। কারণ, ট্রেনটি নতুন। অন্তত দু’বছর কোনও সমস্যা হওয়ারই কথা নয়। কিন্তু রেক তৈরিতেই যদি সমস্যা থাকে, তবে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এখানকার ইঞ্জিনিয়াররা দেখেই বলেছিলেন, রেকে প্রচুর সমস্যা আছে। যে কারণে তাঁরা ছাড়পত্রই দেননি। তাই মেধার লোক রেখে ট্রেন চালানো হচ্ছে।

শনিবারের ঘটনা নিয়ে মেট্রোর অন্দরে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। মেট্রোর রেকের দরজায় একটি সেন্সর থাকে। দুটি দরজার মাঝে কিছু আটকে গেলে দরজা লক হয় না। দরজা লক না হলে ড্রাইভার সিগন্যাল পান না। আর সিগন্যাল না পেলে তিনি ট্রেন ছাড়েন না। তখন ড্রাইভার বা গার্ড নেমে দেখার চেষ্টা করেন, কোন দরজা বন্ধ হয়নি। সেটি ঠিক করে তবেই ট্রেন ছাড়া হয়। এটাই স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল। শুধু দরজার ফাঁকে আটকে দুর্ঘটনা নয়, রেক ও প্ল্যাটফর্মের মাঝে আটকেও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং প্রথম বড় প্রশ্ন হল, স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল কি মানা হয়েছিল ট্রেন তৈরির ক্ষেত্রে? দরজা বন্ধ না হলেও ট্রেন ছুটল কীভাবে?

তাছাড়া মেট্রো রেলে অপারেশনাল গাইডলাইন তথা ‘ব্লু বুকে’ বলা হয়েছে, ট্রেন ছাড়ার আগে একটি বেল বাজবে। যা প্রায় তিরিশ সেকেন্ড ধরে বাজার কথা। এই বেল বাজার পর দরজা লক হবে। তারপর দরজা লক হলে ট্রেন চলতে শুরু করবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মেট্রোর রেকগুলিতে এই বেল আর বাজে না। ফলে যাত্রীরাও বুঝতে পারেন না কখন দরজা বন্ধ হচ্ছে। ফলে ঠেলাঠেলি করে অনেকে ওঠার চেষ্টা করেন। কখনও কারও দেহ আটকে যায়, কখনও আটকে যায় ব্যাগ। এদিনও যে কোনও বেল বাজেনি তা যাত্রীরাই জানিয়েছেন। আপাতত শনিবারের ওই রেকটিকে লোকো শেডে পাঠানো হয়েছে। চেন্নাই থেকে আধিকারিকরা আসছেন তা দেখতে।

[আরও পড়ুন: যান্ত্রিকতার বলি শিল্পী জীবন, অনুজদের স্মৃতিতে মেট্রো দুর্ঘটনায় মৃত সজল কাঞ্জিলাল]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement