অর্ণব আইচ: ১৮ আগস্ট। অপহরণ ও খুনের চারদিন আগেই এই ঘটনা ঘটানোর ছক (Baguiati Murder) কষেছিল সত্যেন্দ্র চৌধুরী। কিন্তু সেদিন নিহত কিশোর অতনু দে’র পিসতুতো ভাই অভিষেক নস্করের বদলে লাল রঙের গাড়িটিতে ছিল তারই পাড়ার এক বন্ধু সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই গাড়িতে সত্যেন্দ্র ছাড়াও ছিল তার চার সঙ্গী, যাদের মধ্যে দু’জন পরে নেমে যায়। বেশি রাতে যখন রাজারহাট থেকে গাড়ি করে সত্যেন্দ্র অন্ধকার রাস্তায় প্রবেশ করে, তখনই কিছু ঘটতে পারে আঁচ করে চিৎকার করে ওঠে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সায়ন। এদিকে তার মা অসীমা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্রমাগত ফোন করতে থাকেন ছেলেকে। এমনকী, ছেলের খোঁজে রাতেই রাজারহাটে চলে যাবেন বলে জানান। সম্ভবত ওই কারণেই সেই রাতে সত্যেন্দ্র চৌধুরী অপরাধ ঘটানোর চেষ্টা করেনি। অতনু ও সায়নকে নিয়ে ফিরে আসে জগৎপুরের বাড়িতে। সেদিন কী হতে পারত, তা মনে করে আতঙ্কে কেঁপে উঠছেন সায়নের মা অসীমাও।
এরপর গত ২২ আগস্ট অপহরণ ও খুনের আগে সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ কিছু আশঙ্কা করেই রাজারহাট (Rajarhat) থেকে বন্ধু সায়নকে ফোন করেছিল অতনু। যদিও বিশদভাবে কিছু বলতে চায়নি সে। তখনও সে ও তার ভাই অভিষেক ছিল অপহরণকারীদের কবজায়। এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্যেন্দ্র দোকান তথা শোরুম থেকে ৫০ হাজার আগাম দিয়ে এক লক্ষ টাকার বাইক কেনার কিছুদিনের মধ্যে তা খারাপ হয়ে যায়। সেটি শোরুমে নিয়ে যাওয়ার পর অতনুকে ‘জামাইবাবু’ সত্যেন্দ্র বলে, রাজারহাটের বিষ্ণুপুরের কয়েকটি জায়গায় কোম্পানির শোরুমে সে বাইকটিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সেখানে সারানোর পর অতনু তা চালিয়েই নিয়ে আসতে পারবে। সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জানায়, গত ১৮ আগস্ট সে জিম করে বাড়ি ফেরার পরই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ফোন করে বলে, তার সঙ্গে বাইকটি আনার জন্য রাজারহাটে যেতে। প্রথমে সায়ন রাজি না হলেও পরে যেতে রাজি হয়। সত্যেন্দ্র তাদের গাড়িতে তোলে। রাস্তা থেকে গাড়িতে ওঠে আরও দু’জন। রাজারহাটের আগে গাড়িতে ওঠে আরও দু’জন। পরে তারা নেমে যায়।
অতনু ও সায়নকে রাজারহাটের বিষ্ণুপুরের একটি শোরুম দেখিয়ে তাদের গাড়িতে বসতে বলে সত্যেন্দ্র ভিতরে যায়। ফিরে এসে বলে, চারটি বাইক মেরামতির কাজ শেষ করে তার বাইক সারাইয়ের কাজ শুরু হবে। ঘণ্টা দুই সময় লাগবে। এর মধ্যে সায়নের মা ছেলেকে বারবার ফোন করতে থাকেন। সায়ন তাড়াহুড়ো করতে থাকলে তাদের ডিম-পাউরুটিও খেতে দেয় সত্যেন্দ্র। বাইক সারাইয়ের নাম করে সময় নিতে থাকে। প্রায় রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বলে, তার বাইকটি আর সারানো যাবে না। বাড়ি ফেরার নাম করে গাড়িটি অচেনা অন্ধকার রাস্তায় ঢুকে পড়ে। এতে সন্দেহ হয় সায়নের। সে চেঁচামেচি শুরু করে। নিজের মোবাইলে গুগল ম্যাপ খুলে রাস্তা বের করে চালককে নির্দেশ দিতে থাকে। এর ফলে সেই রাতে আর কোনও দুষ্কর্ম করতে সাহস পায়নি সত্যেন্দ্র।
২২ আগস্ট খুন ও অপহরণের আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ অতনু ফোন করে সায়নকে বলে, সে অনলাইন গেম খেলতে রাজারহাটে এসেছে। তখন সায়ন বন্ধুকে তার বাইকের কথা জিজ্ঞাসা করতে সে বলে, এই ব্যাপারে তার কিছু বলার আছে। সেই ব্যাপারে সায়ন আরও প্রশ্ন করতে সে জানায়, পরে বলবে। কিন্তু তখন সায়ন বুঝতেও পারেনি যে, কী হতে চলেছে। এর পরই রাতে অতনুর মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন তার মা টুকটুকি কাঁদতে কাঁদতে এসে বলেন, ছেলে নিখোঁজ। ১৭ দিন পর জানা যায়, খুন হয়েছে অতনু ও তার ভাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.