ফাইল ছবি
নিরুফা খাতুন: আনন্দপুরে চলন্ত গাড়িতে তরুণীকে ধর্ষণ মামলায় নয়া মোড়। আদৌ ধর্ষণের কোনও ঘটনা ঘটেছে কি না তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। নেতাজি নগরে দুই যুবকের অপহরণের মামলায় তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে এনেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। অপহরণের মামলায় শুক্রবার রাতে সৌভিক দাস মাল (৩৪) ওরফে সানি নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে নেতাজি নগর থানা।
সোমবার দুপুরের দিকে শুভজিৎ মণ্ডল ও তাঁর চালককে নেতাজি নগরে একটি ফ্ল্যাটে অপহরণ করে রাখা হয়েছিল। শুভজিৎ তরুণীর প্রাক্তন প্রেমিক। প্রাক্তন প্রেমিক ও তাঁর চালকের বিরুদ্ধে তরুণী গণধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। ধর্ষণে অভিযুক্ত দুই যুবককে যাঁরা অপহরণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ধৃত সৌভিক সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। মারধর করে শুভজিৎ ও তাঁর চালককে মাদক দিয়ে বেহুঁশ করে ফ্ল্যাটে আটকে রেখেছিলেন ধৃত যুবক তদন্তে নেমে জানতে পারে পুলিশ। আবার সেই রাতে নির্যাতিতা তরুণী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিয়ে ধৃত যুবকই গাড়ি চালিয়ে বাসন্তি হাইওয়ের দিকে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এখানেই রহস্য তৈরি হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তাঁদের যদি আগেই অপহরণ করা হয়ে থাকে তাহলে তরুণীকে ধর্ষণ করল কারা?
সৌভিকের ভিআইপি নগরে একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। তরুণীর ঘনিষ্ঠ ওই বন্ধু তাঁর পূর্ব পরিচিত। সূত্রের খবর, কোনও সিনেমা কেনার জন্য সোমবার দুপুরে শুভজিৎকে নেতাজি নগরে ফোন করে ডেকেছিলেন ওই তরুণীর বন্ধু ও তাঁর সঙ্গীরা। শুভজিৎ নেতাজি নগর এলে তাঁকে একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ফ্ল্যাট তরুণীর বন্ধুই ভাড়া নিয়েছিলেন। ফ্ল্যাটে যেতেই সৌভিক সহ আরও কয়েকজন মিলে যুবককে মারধর করেন। এরপর এক ব্যক্তি নিচে এসে যুবকের গাড়ি চালককেও ওপরে ডেকে নিয়ে যান। দুজনকে মাদক দিয়ে বেহুঁশ করে হাত-পা বেঁধে ফ্ল্যাটে তালাবন্ধ করে চলে যান সৌভিকরা। যে সময় শুভজিৎকে ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঠিক সেই সময় তরুণী তাঁর বন্ধুর সঙ্গে লেক মলে সিনেমা দেখতে যান।
সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছে, অ্যাপ ক্যাব করে দুজনে মলের সামনে নামেন। সিনেমা দেখার পর শপিং মল থেকে বেরিয়ে তরুণী ক্যাব নিয়ে বাইপাসে একটি অভিজাত আবাসনে চলে যান। গড়িয়াহাটের কাছে একটি গাড়ি রাখা ছিল তাঁর বন্ধু সেই গাড়িতে উঠে চলে যান। এরপর ফের গাড়ি নিয়ে বন্ধু বাইপাসের ওই আবাসনে আসেন। তরুণীকে গাড়িতে নিয়ে বাসন্তি হাইওয়ের দিকে চলে যান। সেই সময় গাড়ি চালাতে দেখা যায় সৌভিককে। ওই রাতেই আনন্দপুর থানায় তরুণী এসে প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, পানীয়র সঙ্গে কিছু মিশিয়ে বেহুঁশ করে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে প্রাক্তন প্রেমিক। ধর্ষণের সময় গাড়িতে শুভজিতের চালকও ছিলেন। এখানেই সন্দেহ হয়।
লালবাজার সূত্রে খবর, অপহৃত যুবকদের সঙ্গে আনন্দপুরে ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের নাম এক থাকায় প্রথমে মনে হয়েছিল অভিযুক্তরা নিজেদের বাঁচাতে অপহরণের গল্প ফেঁদেছে। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে তরুণীয় অভিযোগ মত যে সময় ধর্ষণ করা হয়েছিল ওই সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন সৌভিক। আর এই সৌভিক নেতাজি নগর ফ্ল্যাটে শুভজিতদের অপহরণ করে রেখেছিল এবং সে তরুণীর ঘনিষ্ঠ ওই বন্ধুর পূর্ব পরিচিত। তাই সেই রাতে আদৌ তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল নাকি তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তদন্তকারীরা।
এদিন আদালতে সৌভিককে তোলা হয়। ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে চেয়ে সরকারি আইনজীবী জানান, এই মামলার সঙ্গে আনন্দপুরে ধর্ষণ মামলার যোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ধৃতকে এদিন ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজত দেন বিচারক। দুই মামলার জট কাটাতে এদিন লালবাজারে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল নিজেও ধৃতকে জেরা করেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে অপহরণের মামলা রুজুর পর থেকে তরুণীর ওই বন্ধু পলাতক। ইতিমধ্যে তদন্তকারীরা জানাতে পেরেছেন, তরুণীর ওই বন্ধুর নামে মুম্বইয়ে সাত কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। সেই টাকার একটা বড় অংশ সৌভিককে দিয়েছিল ওই যুবক। মুম্বই পুলিশও অভিযুক্তের খোঁজে কলকাতায় এসেছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.