অর্ণব আইচ: ‘দিদি আর মাকে গালিগালাজ করছিল। তাই অয়নকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করেছি।’ হরিদেবপুরে যুবক খুনের মূল অভিযুক্ত নাবালক কিশোরের বক্তব্যে হতবাক পুলিশ। যদিও আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ওই নাবালকের মা রুমাকে জেরা করে। জেরায় রুমার দাবি, গত ৬ মাস ধরে অয়নের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। আর মোবাইল না পেলে তাঁকে খুনের ছকও কষা হয়। আর সেই কারণেই মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা বলার টোপ দিয়েই রুমা অয়নকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসা হয়। এর পর পুলিশের প্রশ্ন, তবে কি মা ও মেয়ে মিলে নাবালক কিশোরকে খুনের জন্য ইন্ধন জুগিয়েছিল?
ধরা পড়ার পর আইন অনুযায়ী একটি সরকারি হোমে পাঠানো হয় প্রীতির নাবালক ভাইকে। সিডব্লুসি-র অনুমতি নিয়েই পুলিশ ওই কিশোরকে জেরা করে। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, জেরার মুখে নাবালক দাবি করেছে যে, সে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল। বাড়িতে ঢুকে অয়নকে দেখে। অয়নের সঙ্গে তার দিদি প্রীতির বচসা হয়। সেই বচসায় যোগ দেয় তার মা। পরে বাবা দীপক জানাও বাড়িতে আসেন। প্রথমে দিদি বাড়িতে ছিল না বলে অয়ন ঝামেলা শুরু করে। বচসা চলাকালীন মা ও দিদিকে অয়ন গালিগালাজ করতে থাকে বলে দাবি নাবালকের। এর আগেও অয়ন মা ও দিদির সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেছে। সেই দৃশ্য তার চোখেও পড়ে। সেই কারণেও অয়নের উপর তার পুরনো রাগ ছিল বলে দাবি।
পুলিশের দাবি, জেরায় অভিযুক্ত নাবালক জানিয়েছে, ছাদে লুকিয়ে থাকলেও অয়নকে টেনে প্রথমে নির্মীয়মাণ তিনতলা ও তার পর দোতলায় নামানো হয়। তখনও চিৎকার করে গালিগালাজ দিচ্ছিল সে। মা ও দিদির অপমান সহ্য করতে না পেরেই নির্মাণের জন্য পড়ে থাকা ইট দিয়ে সে অয়নের মাথায় জোরে আঘাত করে। তাঁর মাথা থেঁতলে যায়। এর পর ওই কিশোর তার বন্ধুদের ফোন করে দেহটি মালবাহী গাড়িতে তোলে লোপাট করার জন্য। তখন মৃত্যু নিশ্চিত করতে অয়নের গলায় ফাঁস দেয় নাবালকেরই এক বন্ধু। যদিও প্রীতি ও নাবালকের মা রুমাকে টানা জেরার পর পুলিশ যে তথ্য জানতে পেরেছে, তার সঙ্গে নাবালকের বক্তব্যও পুলিশ মিলিয়ে দেখছে।
রুমার দাবি, মেয়ে প্রীতির সঙ্গেই মূলত সম্পর্ক ছিল অয়নের। তার সঙ্গে অয়নের সম্পর্কের বিষয়টি রুমা অস্বীকার করলেও পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। রুমা জানায়, অয়ন প্রীতির অশ্লীল ছবি তুলে রেখেছিল। এর পর নার্সিং হস্টেল থেকে যখনই প্রীতি বাড়িতে ফিরত, তখনই অয়ন তাঁকে সম্পর্ক তৈরির জন্য চাপ দিত। সম্পর্ক তৈরি না করলেই অশ্লীল ভিডিও ও ছবি ফাঁসের হুমকি দিত অয়ন। গত ৬ মাস ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে গোলমাল চলছে। কিছুতেই সেই ভিডিও ও ছবিগুলি মোছেনি অয়ন। তাই তাকে একা পেয়ে তার মোবাইল কেড়ে নেওয়ার ছক কষে মা ও মেয়ে। পুজোর শুরু থেকেই অয়নকে ফোন করে বাড়িতে ডাকার চেষ্টা করে রুমা ও প্রীতি। কিন্তু বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অয়ন আসছিল না। তাই দশমীর রাতেই রুমা বলে, সে মেয়ে প্রীতির সঙ্গে অয়নের বিয়ে দেবে বলেই ঠিক করেছে। তাতে প্রীতিও রাজি। তাই বিয়ের টোপ দিয়েই অয়নকে ফোন করে ডেকে পাঠায় রুমা। বন্ধু রাজুকে সে ব্যাপারটি জানায়। রাজু তাকে প্রীতির বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে প্রীতি ও তার বাবা দীপক জানাকে আলাদাভাবে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.