লোকসভা ভোটের আগেই দলবদল করেন মুকুটমনি অধিকারী।
অর্ণব আইচ: এক কোটি টাকা পণ না দিলে বউমাকে ঘরে তুলব না।ছেলের বিয়ের পর বেয়ানের বাড়িতে ফোন করে এমনই জানিয়ে ছিলেন বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর বাবা। বধূ অত্যাচারের অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের হাতে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। যদিও মুকুটমণি অধিকারীকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৭ জুন পূর্ব কলকাতার তিলজলার একটি অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরীর অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু হয়। গত ২৮ মে স্বস্তিকাদের ফ্ল্যাটেই তাঁর সঙ্গে নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়। ঘরোয়া অনুষ্ঠানে মুকুটমণির মা, বাবা, দিদি, জামাইবাবু, ভাই ও স্বস্তিকার মা উপস্থিত ছিলেন। স্বস্তিকা ও মুকুটমণি বৈবাহিক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার পর ফ্ল্যাটে পরিবারের লোকেদের সঙ্গেই সময় কাটান। পুলিশের কাছে স্বস্তিকার অভিযোগ, রেজিস্ট্রি বিয়ের দিন মুকুটমণির বাড়ির তরফ থেকে তাঁকে সোনার গয়না দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পরই তাঁর কাছ থেকে সেই গয়না নিয়ে নেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, তিলজলা থানায় স্বস্তিকার অভিযোগ জানিয়েছেন, স্বস্তিকা ও মুকুটমণির বিয়ের আগে থেকেই পণ নিয়ে গোলমাল চলছিল। অথচ গত বছরের ২৪ নভেম্বর পেশায় চিকিৎসক মুকুটমণি ও তাঁদের পরিবারের লোকেরাই স্বস্তিকাদের বাড়িতে ‘মেয়ে দেখতে’ আসেন। তখনই বিধায়ক জানিয়ে দেন যে, তিনি স্বস্তিকাকেই বিয়ে করবেন। এর পর তাঁদের মধ্যে কথাও হত। সেই প্রমাণও স্বস্তিকার কাছে রয়েছে বলে দাবি। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর চ্যাটও হয়েছে দু’জনের মধ্য়ে।
সোমবার লালবাজারে পুলিশের এক কর্তা জানান, দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক বজায় থাকাকালীন, তাঁদের বিয়ের আগেই বিজেপির বিধায়ক মুকুটমনি অধিকারীর বাবা তাঁর বেয়ান তথা স্বস্তিকার মা একসময়ের কংগ্রেস নেত্রী সোমা রাণীশ্রী রায়কে বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে গেলে মেয়ের পরিবারকে এক কোটি টাকা পণ দিতে হবে। তা শুনে হতবাক হয়ে যান স্বস্তিকার মা। তিনি ‘হবু বেয়াই’কে জানান, একসঙ্গে এত টাকা দেওয়া এখনই তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, সংসারে শুধু তিনি ও তাঁর মেয়ে। এর পর তিনি মুকুটমণির বাবাকে অনুরোধ জানান, মেয়ে স্বস্তিকার সঙ্গে তাঁর ছেলের বিয়ে দিতে। বিয়ের পর ক্রমে তিনি ওই টাকা দিয়ে দেবেন। গত ১৫ মে স্বস্তিকা একাই ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে বেড়াতে যান। ২৭ মে ফিরে বাড়ি আসেন। স্বস্তিকা বিদেশে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে মুকুটমণির বহু চ্যাটও হয়। পুলিশের কাছে আসা অভিযোগ অনুযায়ী, ২৮ মে ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই মুকুটমণির বাবা একাধিকবার ফোন করে স্বস্তিকার মায়ের কাছে এক কোটি টাকা পণ চান। শেষ পর্যন্ত তিনি বেয়ানকে জানিয়েও দেন, এক কোটি টাকা পণ না দিলে তিনি বউমাকে ঘরে তুলবেন না। একই সঙ্গে তিনি মুকুটমণির সঙ্গে স্বস্তিকার ডিভোর্সের জন্যও চাপ দিতে থাকেন। এদিকে, স্বস্তিকার অভিযোগ তাঁর দেওর, তথা মুকুটমণি অধিকারীর ভাইয়ের বিরুদ্ধেও। নববধূ স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী দাবি করেন, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে জানান, পেশায় চিকিৎসক বিজেপির বিধায়ক জানতেন না যে, স্বস্তিকার পরিবার আসলে কংগ্রেসি ও স্বস্তিকার মা লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। সেই কারণেই স্বস্তিকাকে বলা হয়, তিনি যেন মুকুটমণিকে ‘মিউচুয়াল ডিভোর্স’ দেন। ডিভোর্সের চাপ দিয়ে মুকুটমণির ভাই তাঁকে হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। রেজিস্ট্রির পর থেকে নববধূ স্বস্তিকার স্বামী মুকুটমণি অধিকারী তাঁর সঙ্গে একবারও যোগাযোগ করেননি, এমনই অভিযোগ তাঁর। স্বামী তাঁকে ডিভোর্স দিতে চান, তা তিনি মেনে নিতে পারেননি বলেই দাবি স্বস্তিকার। ওই নববধূ তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও দেওরের বিরুদ্ধে বধূ অত্যাচার, পণ চেয়ে অত্যাচার, তোলাবাজি, বিশ্বাসভঙ্গ, হুমকি, হেনস্তা, ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করেন। এই ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করতেই বিজেপির বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীকে তিলজলা থানার পুলিশ জেরা করতে পারে। অন্য অভিযুক্তদেরও জেরার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.