ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: যদি প্রসূতি করোনা আক্রান্ত হন, তবে জঠরে তাঁর সন্তানের ভ্রুণও কি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে? ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন নিয়ে যখন দুনিয়া তোলপাড়, তখনই ভয়ঙ্কর ঘটনা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। তিন প্রসূতির সদ্যোজাতর নমুনা পরীক্ষায় মিলল সার্স কোভ-২। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (ICMR) গবেষকরা আগেই জানিয়ে ছিলেন, এই নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন। এই ধরনের ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন যে অসম্ভব তা এখনই বলা যাবে না। সেই তথ্যই প্রমাণিত হল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। এর আগে সারা পৃথিবীর মধ্যে ফ্রান্সে এক সদ্যোজাতর শরীরে জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই করোনার নমুনা মিলেছিল। তারপর এই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ!
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডা. ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, বাচ্চাগুলো জন্মানোর ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। সেখানে তো কোনও রোগী নেই। ভয়টা সেখানেই। প্রশ্ন উঠছে ওই সদ্যোজাতরা কীভাবে আক্রান্ত হল? সুপার বলেছেন, এখন তো সবাই জানে ড্রপলেট থেকেই সংক্রমণ হচ্ছে। কিন্তু ওই শিশুদের মধ্যে ড্রপলেট সংক্রমণের আশঙ্কা অত্যন্ত ক্ষীণ। মায়ের জঠরে শিশু একটি ফ্লুইডের ঘেরাটোপে থাকে। মায়ের পেটে এই তরল ভ্রুণকে নানা বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। সেই এমিনিউটিক ফ্লুইডেই কি ভাইরাস ছিল? এখনও সেই ফ্লুইড পরীক্ষা করার মতো পরিকাঠামো নেই শহরে। তবে এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে সে ব্যবস্থাও অচিরেই হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, এটা যে ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন এখনই তা বলা সম্ভব নয়। শিশুটি জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে যদি সোয়াব টেস্ট করা হয় সেখানে যদি পজিটিভ আসে তবেই বলা যাবে এটি ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন। বাচ্চা জন্মানোর পর মা যদি তাকে দুধ খাওয়াতে যায়। কিম্বা হাসপাতালের কোনও কর্মী তাঁকে হাতে করে সরাতে গেলেন তাঁদের থেকেও শিশুর করোনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি ‘অ্যাকওয়ার্ড সংক্রমণ’। সিজারের সময় রক্তরস শিশুর গায়ে লেগেও সংক্রমণ হয়। সেটিকেও ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন বলা যাবে না। কীভাবে ৩ শিশুর দেহে সংক্রমণ ছড়াল তা নিয়ে চাপানউতোর চললেও, সূত্রের খবর সদ্যোজাতর পরিচর্যা সংক্রান্ত নিয়মে আরও কড়াকড়ি আনতে চলেছে রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তর। প্রতিটি হাসপাতালে স্ত্রীরোগ ও প্রসুতি বিভাগে এবার আরও বিধিনিষেধ বলবৎ হবে বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.