Advertisement
Advertisement

রবীন্দ্রনাথকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেনি ন্যাস, নয় আরএসএসের শাখাও

‘যে সিপিএম রামকৃষ্ণদেবকে মৃগী রুগী বলত, তারা কোন মুখে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলে?’

Never objected to Rabindranath Tagore’s work in text books: NYAS
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 26, 2017 10:36 am
  • Updated:July 26, 2017 10:36 am  

দীপেন্দু পাল: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার কোনও সুপারিশই করেনি শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস। এনসিইআরটিকে পাঠানো ন্যাসের সুপারিশে পাঠ্যপুস্তক থেকে কবিগুরুর কোনও কবিতা বাদ দেওয়ার সুপারিশই করা হয়নি। বুধবার ন্যাসের তরফে কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানালেন শিবশঙ্কর দাস, আইনজীবী সুশান্ত সেনগুপ্তরা। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের কোনও সংস্রব নেই। একশ্রেণির সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক দল সুকৌশলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ও সাধারণ মানুষকে ভুল পথে চালানোর জন্য ভ্রান্ত খবর প্রচার করছে। একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যম ও এ রাজ্যেরও দু’টি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ন্যাসের সদস্যরা।

ঠিক কী নিয়ে বিতর্ক?

Advertisement

সম্প্রতি NCERT পাঠ্যপুস্তকে সংশোধনের জন্য কেন্দ্র শিক্ষকদের কাছ থেকে সুপারিশ চেয়ে পাঠায়। প্রায় ৭০০০ সুপারিশ জমা পড়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে। অভিযোগ ওঠে, শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাসের তরফে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গালিব-সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নির্দিষ্ট কিছু লেখা বাদ দিতে হবে। এই অভিযোগকে ঘিরে তুলকালাম শুরু হয় রাজ্যসভায়। সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে তীব্র প্রতিবাদ করা জানানো হয়। জিরো আওয়ারে ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কারও কাছ থেকে কোনও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই।” কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে রবি ঠাকুরের তিনটি বইও উপহার দেন ডেরেক। দৃশ্যতই, চাপে পড়ে জাভড়েকর বলতে বাধ্য হন, পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথকে বাদ দেওয়ার কোনও ভাবনাচিন্তাই তাঁর মন্ত্রক করছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করা হবে না। সীতারাম ইয়েচুরি টুইট করেন , ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য , উচ্চ যেথা শির’- রবীন্দ্রনাথের এই ভাবনাকে ভয় পায় ও নিন্দা করে আরএসএস৷ শুধু তাই -ই নয় , উর্দুর জন্ম তো ভারতে , সেই ভাষার শব্দকে তারা বাদ দিতে বলছে৷ আরএসএস কতটা ভারত-বিদ্বেষী এতেই তা প্রমাণ হয়ে যায়৷’

[রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশনে আগুন, আতঙ্কে যাত্রীরা]

কিন্তু এদিন কলকাতায় ন্যাসের সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করা হয়, রবীন্দ্রনাথকে বাদ দেওয়ার কোনও সুপারিশই করা হয়নি। শুধুমাত্র শিশুমনে প্রভাব ফেলে এমন কিছু অসত্য ঐতিহাসিক প্রসঙ্গকে বাদ দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, আরএসএসের সঙ্গে ন্যাসের কোনও যোগ নেই বলেও বারবার উল্লেখ করেছেন সুশান্ত সেনগুপ্তরা। তাঁদের দাবি, ন্যাস একটি বেসরকারি, স্বাধীন ও পেশাদার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের সুপারিশ মানতে কেন্দ্রও বাধ্য নয়। তাঁরা যে যে বিষয়গুলি বাদ দিতে সুপারিশ করেছেন, সেগুলির দিকে গুরুত্ব না দিতে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত কয়েকটি প্রসঙ্গ তুলে আরএসএস ও ন্যাসের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

কী সুপারিশ করেছে ন্যাস?

ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ পাঠায় ন্যাস। ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকে ভারতের সংস্কৃতি, ইতিহাসের কিছু ‘বিকৃতি’ রয়েছে বলে দাবি তুলে যেগুলির সংশোধন করার সুপারিশ করা হয়। যেমন, ষষ্ঠ শ্রেণির ‘হামারে অতীত’ পাঠ্যপুস্তকে সংস্কৃতি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার কথা একটাই পরিচ্ছদে বর্ণনা করা হয়েছে। ওই বইয়ের ৫৫ নম্বর পাতায় বলা হয়েছে, মহিলা ও শূদ্রদের বেদ পড়ার কোনও অধিকার নেই। সেটার সংশোধন চেয়ে ন্যাস সুপারিশ করে, উচ্চশিক্ষিত মহিলারও বহু উদাহরণ রয়েছে। গার্গী, মৈত্রেয়ীর মতো বহু বিদূষী মহিলাদের উল্লেখ রয়েছে। তাই ওই ভুল সংশোধন করার দাবি জানিয়েছে ন্যাস। কিন্তু কোথাও একবারও রবীন্দ্রনাথের কবিতা বাদ দিতে বলা হয়নি? যেমন বলা হয়নি, গালিবের কোনও উর্দু শায়েরি বাদ দেওয়ার কথা। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে এক জায়গায় ন্যাস সুপারিশ করেছে, বারবার দাঙ্গা শব্দটি না লেখাই উচিত হবে, এতে শিশুদের মনের উপর গভীর প্রভাব পড়তে পারে।

সংগঠনের সদস্যদের কটাক্ষ, যে সিপিএম একসময় রামকৃষ্ণকে মৃগী রুগী, রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া বলে মন্তব্য করত, তারা কোন মুখে রবীন্দ্রনাথের হয়ে সওয়াল করে? বরং ন্যাসই বারবার পাঠ্যপুস্তকে ঋষি অরবিন্দ, মদনমোহন মালব্য, শহীদ ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদদের কথা আরও বেশি বেশি করা পড়ানোর পক্ষে। কিন্তু কেন আচমকা ন্যাসের বিরুদ্ধে দেশের বিশিষ্টজনদের অবমাননা করার অভিযোগ উঠল, সেটা তাঁরাও বুঝতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। সংঘের নেতা বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়ও এদিন স্পষ্ট জানিয়েছেন, ন্যাস একটি স্বাধীন সংগঠন। আরএসএসের সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই। ন্যাসের নাম জড়িয়ে সংঘের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার প্রচেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এর বিরুদ্ধে সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে প্রতিবাদ জানানোরও ডাক দিয়েছে সংঘ।

[চুল্লিতে ঢোকানোর আগে নড়ে উঠল মৃতদেহ!]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement