ছবি: ফাইল
অর্ণব আইচ: জঘন্য অপরাধ। ভয়াবহ। বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। নৃশংসভাবে খুন করার সঙ্গে নেতাজিনগরে বৃদ্ধাকে ‘ধর্ষণ’ ও যৌন হেনস্তা করা হয়েছিল। রং করার রোলার দিয়ে বৃদ্ধার যৌনাঙ্গে আঘাত করেছিল খুনি। একতলার সিঁড়ির কাছে এই ভয়ংকর অপরাধ করার পর সে দোতলায় গিয়ে খুন করে বৃদ্ধার স্বামী দিলীপ মুখোপাধ্যায়কে।
এই তথ্য ও মন্তব্য উল্লেখ করে ৮৪ দিনের মাথায় অভিযুক্ত রঙের মিস্ত্রি মহম্মদ হামরুজ আলম ওরফে তুরুয়া ওরফে আলমের বিরুদ্ধে আলিপুর আদালতে চার্জশিট দাখিল করল পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুন, ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণ ও ৩৯৪ ধারায় ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ২৯ জুলাই রাতে নেতাজিনগরের অশোক অ্যাভিনিউয়ে নিজের বাড়ির মধ্যেই খুন হন বৃদ্ধ দিলীপ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না। পরের দিন তাঁদের দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ ও মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে জানতে পারে যে, বাড়ির রঙের মিস্ত্রি হামরুজ এই অপরাধ করেছে। কাটিহারের বারসোই এলাকায় তার বাড়ির কাছ থেকেই হামরুজকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ৩০০ পাতার এই চার্জশিটে সাক্ষীর সংখ্যা পঞ্চাশেরও বেশি। বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার দেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়ে হতবাক হয়ে যান গোয়েন্দারা। বৃদ্ধার যৌনাঙ্গ দিয়ে রীতিমতো রক্তপাত হয়েছিল। তাঁর যৌন হেনস্তা ও ‘ধর্ষণ’-এর চিহ্ন স্পষ্ট মেলে। গোয়েন্দাদের মতে, শহরে এক আগে বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা খুন হয়েছেন। কিন্তু খুন করার সময় কোনও বৃদ্ধাকে ধর্ষণের মতো ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ই বটে।
চার্জশিটে জানানো হয়েছে যে, যেহেতু নিঃসন্তান মুখোপাধ্যায় দম্পতি শুধু দু’জনই থাকতেন, তাই তাঁদের সফট টার্গেট করে রঙের মিস্ত্রি হামরুজ, যে কয়েকদিন আগেই বাড়িতে কাজ করতে এসেছিল। সে লুকিয়ে ছিল সিঁড়ির তলায়। রাতে বৃদ্ধা এসে মূল দরজা বন্ধ করতেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অভিযুক্ত। বৃদ্ধার শাড়ির পাড় দিয়ে তাঁর গলা পেঁচিয়ে ধরে সে। তিনি মাটিতে পড়ে যান।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জানিয়েছে, তাঁর যৌনাঙ্গের আঘাত ‘অ্যান্টিমর্টাল’ অর্থাৎ বৃদ্ধা জীবিত থাকতেই তাঁর যৌন হেনস্তা করা হয়। অভিযুক্ত স্বীকার করেছে যে, সে বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে। রঙের কাজ করতে এসে সে দু’টি রোলার রেখে দিয়েছিল সিঁড়ির তলায়। একটি রোলার দিয়ে তাঁর যৌনাঙ্গে আঘাত ও একটি রোলার মুখে ঢুকিয়ে দেয় অভিযুক্ত। বৃদ্ধাকে খুন করে সে দোতলায় উঠে গিয়ে প্রায় অথর্ব ও অশক্ত বৃদ্ধ দিলীপ মুখোপাধ্যায়কে খুন করে সে।
খুনের পর চাবি দিয়ে ৯টি আলমারি খোলে। টাকা ও প্রচুর গয়না নিয়ে রাতেই উধাও হয়ে যায় সে। অন্তত ২৫ জন মিস্ত্রিকে জেরা করে ধীরে ধীরে হামরুজকে পুলিশ শনাক্ত করে। একাধিক সিসিটিভির ফুটেজ ও মোবাইলের টাওয়ারও তার প্রমাণ দেয়। তার বিরুদ্ধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চার্জ গঠন করে শুনানি শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.