কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: রোগী নয়, রোগের থেকে দূরে থাকুন – মহামারী রুখে সামাজিক সচেতনতা প্রচারে এই আপ্তবাক্য যে স্রেফ কথার কথাই থেকে গিয়েছে, ফের তার প্রমাণ মিলল খাস কলকাতা শহরেই। উপরের ফ্ল্যাটে করোনা (Coronavirus) রোগী, তাঁর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে, স্রেফ এই আশঙ্কায় প্রতিবেশী ফ্ল্যাটে চুপিসারে তালা লাগিয়ে দিলেন আবাসনেরই আরেক বাসিন্দা। পরে পুলিশ গিয়ে তালা খুলে তাঁদের মুক্ত করে। সাতসকালে কেষ্টপুরের অভিজাত একটি আবাসনে এ ধরনের ঘটনায় কিছুটা হতবাক অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে, করোনা নিয়ে সমাজের কোনও স্তরের মানুষই কি সংস্কারমুক্ত হতে পারছেন না?
কেষ্টপুর ঘোষপাড়া এলাকার অভিজাত আবাসন। এখানকার ছ’তলার এক বাসিন্দার স্ত্রী করোনা পজিটিভ হয়ে ভরতি বাগুইআটির এক হাসপাতালে। স্বাস্থ্যদপ্তরের নির্দেশমতো বাড়ির সকলেই করোনা পরীক্ষা করান। বৃহস্পতিবার রিপোর্টে দেখা যায়, গৃহকর্তার মা-ও করোনা পজিটিভ (Covid Positive)। তাঁকে হোম আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এই খবর কানে পৌঁছতেই পাঁচতলার বাসিন্দা পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার দীপ সেনগুপ্তর মনে আশঙ্কা হয় যে ওই ফ্ল্যাট থেকে যদি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। আর এই আশঙ্কা থেকেই তিনি যা ঘটালেন, তা মোটেই কাম্য ছিল না।
আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দীপ সেনগুপ্ত মাস্ক, ফেসশিল্ড পরে বৃহস্পতিবার মাঝরাতে চুপিসাড়ে উপরে উঠে ছ’তলার ওই ফ্ল্যাটে দরজার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিচ্ছেন। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতে গিয়ে বিষয়টি টের পান গৃহকর্তা। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরও দরজা না খোলায় তিনি বুঝতে পারেন যে বাইরে থেকে তা লক করা।
এরপর তিনি ১০০ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সাহায্য চান। নিউটাউন থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। দীর্ঘক্ষণ ধরে তালা খোলার চেষ্টা চলে। তালা ভাঙা হবে কি না, সেই ভাবনাতেও বেশ খানিকটা সময় চলে যায়। এরপরই আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়। তাতে পাঁচতলার ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী দীপ সেনগুপ্তকে চিহ্নিত করেন তালাবন্দি ফ্ল্যাটের ব্যক্তি। বোঝা যায়, বাইরে থেকে কে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। এরপরই দীপকে ডেকে পাঠিয়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে তালা খোলান। পুলিশি জেরার মুখে পড়ে দীপ স্বীকার করেন যে তিনি সংক্রমণের ভয়েই ওই কাজ করেছিলেন।
সাতসকালে এভাবে তালাবন্দি হয়ে বেশ সমস্যার মুখে পড়েছে ওই পরিবার। সকাল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজেও বেরতে পারেননি। বাড়িতে করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধা, তাঁর জন্য যদি জরুরিভিত্তিতে কোনও ওষুধ প্রয়োজন হতো, তাহলে তাও কিনতে যেতে পারতেন না – এমন হাজারও আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন ওই ফ্ল্যাটের গৃহকর্তা। যদিও প্রতিবেশীর এ হেন কাজের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রে খবর, করোনা পরিস্থিতিতে এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত তদন্ত শুরু করেছে নিউটাউন থানার পুলিশ। তবে কলকাতার অভিজাত আবাসনে এই ঘটনায় বাসিন্দাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.