অভিরূপ দাস: হিড়িক বাড়ছে রূপশ্রী (Rupashree) প্রকল্পে বিয়ে করার। বিয়ের জন্য পঁচিশ হাজার টাকা পেতে উপচে পড়ছে আবেদনপত্র। গাঁ-গঞ্জ নয়। খোদ কলকাতাতেই শেষ বারো মাসে তিন হাজারের উপর দুস্থ কন্যার কপালে সিঁদুর উঠেছে রূপশ্রী প্রকল্পের সাহায্যে। নিঁখুত হিসাবে তা ৩ হাজার ৩৫৭ জন। শেষ তিন বছরের হিসাব ধরলে ২৩ হাজার ৩১৭ জন দরিদ্র কন্যার বিয়ে হয়েছে এই প্রকল্পের সাহায্যে।
পাত্র মজুত হাতের গোড়ায়। কিন্তু বিয়ের কার্ড, লোক খাওয়ানো, পুরোহিতের খরচ তো বিস্তর। জোগাড় হবে কোত্থেকে? শহরের এমন দীনদরিদ্র কন্যাদের ঘর বাঁধার জন্য সম্বল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রূপশ্রী প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ঘোষিত এ প্রকল্পে প্রথম বারের জন্য বিয়ে হচ্ছে এমন কন্যাদের ২৫ হাজার টাকা সাহায্য করা হয়। এই আর্থিক সাহায্য পাওয়ার জন্য আবেদনের চিঠির পাহাড় জমেছে কলকাতা পুরসভার সমাজকল্যাণ এবং নগর দারিদ্র দূরীকরণ দফতরে। তবে এই প্রকল্পে টাকা পাওয়ার কিছু শর্ত আছে। মেয়র পারিষদ (সমাজকল্যাণ এবং নগর দারিদ্র দূরীকরণ) মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কলকাতার দরিদ্র পরিবারের কন্যারা পুরসভায় লিখিত আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার পর আধিকারিকরা যান আবেদনকারীর বাড়িতে। খতিয়ে দেখা হয়, যিনি আবেদন করেছেন তিনি আদৌ দুঃস্থ কি না। প্রথম বারের জন্য বিয়ে হচ্ছে কি না।
নিয়ম অনুযায়ী প্রথম বারের জন্য বিয়ে হলে তবেই পাওয়া যাবে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা। সমস্ত শর্ত পূরণ হলে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় আবেদনকারীর অ্যাকাউন্টে। সেক্ষেত্রে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা পেতে গেলে আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকাও বাধ্যতামূলক। নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের ৬০ দিন আগে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় কলকাতা পুরসভায়। শুধুমাত্র দুস্থ কন্যাদের বিয়েতে সাহায্য নয়, এ প্রকল্পে ঠেকানো গিয়েছে নাবালিকা বিবাহের মতো অপরাধও। মেয়র পারিষদ মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘যিনি আবেদন করেছেন তাঁর বয়স নূন্যতম আঠারো হতেই হবে। তবে আঠারোতে অনেকের পড়াশোনা শেষ হয় না। সেক্ষেত্রে আমরা পড়াশোনা শেষ করে তবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য পরামর্শ দিই। শুধু তাই নয়, নিজের মতের বিরুদ্ধে বাড়ির লোক জোর করে বিয়ে দিচ্ছে কি না সে বিষয়েও জিজ্ঞেস করা হয় মেয়েটিকে।’’
নিয়ম রয়েছে আরও। স্রেফ রেজিস্ট্রি বিয়ে করলে এই টাকা পাওয়া যাবে না। ছোট করে হলেও অনুষ্ঠান করতে হবে। মেয়র পারিষদ মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চাইলে কেউ একটা কার্ড ছাপাতে পারেন। সেই কার্ডটা প্রমাণপত্র হিসাবে পুরসভায় জমা দিন। প্রয়োজনে বাকি কার্ডের টাকাও কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে দেওয়া হয়। পঁচিশ হাজার টাকায় বিয়ে হয়! পুরসভায় আওয়াজ তোলেন বিরোধীরা। মেয়র পারিষদ মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দরিদ্র পরিবারের কন্যাদের কথা ভেবে এ প্রকল্প শুরু করেছিলেন। অসংখ্য দরিদ্র পরিবারের কাছে এই টাকাটা মস্ত বড় অবলম্বন। ২৫ হাজার টাকায় ছোটও করে হলেও একটা অনুষ্ঠান তারা করতে পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.