দীপঙ্কর মণ্ডল: উধাও রবীন্দ্রনাথের আঁতুড় ঘরের সম্পত্তি। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মূল প্রবেশপথের ধাতব নেমপ্লেট পাওয়া যাচ্ছে না। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে চুরি বলে মনে করছে। দ্রত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায় চৌধুরী। ধারে-ভারে ঘটনাটি নোবেল চুরির মত মারাত্মক না হলেও ঠাকুরবাড়ির নেমপ্লেট চুরি নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যপক শোরগোল।
বিশ্বভারতী থেকে চুরি হয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার ফেরেনি। ষোল বছর আগের কলঙ্কিত ঘটনা দগদগে ঘায়ের মত কষ্ট দেয় এখনও। না রাজ্য না কেন্দ্র কোনও সরকারের পুলিশ সেই রহস্যের কিনারা করতে পারেনি। বহু কমিটি, অনেক তদন্তের পরও নোবেল চুরি স্রেফ লজ্জার অধ্যায় হয়ে থেকে গিয়েছে। সেই ঘটনার পর বিশ্বভারতীতে আঁটোসাঁটো হয়েছে নিরাপত্তা। নজরদারি বেড়েছে রবীন্দ্রভারতীতেও। কোভিডকালে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের খুলে গিয়েছে ঠাকুরবাড়ির দরজা। মিউজিয়ামে টিকিট কেটে ঢুকছেন দেশ-বিদেশের পর্যটক। চলছে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’। এসবের মাঝে বুধবার রাতে উপাচার্য খবর পান, মূল ফটক থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে ধাতব নেমপ্লেট। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই হেরিটেজ বাড়িতে একটি পেরেক মারতেও সরকারি অনুমতি লাগে। ধাতব নেমপ্লেটটি স্ক্রু দিয়ে আঁটা ছিল। যে বা যারা সেটি খুলেছে তা যে চুরির উদ্দেশ্য, তা বলাই বাহুল্য।” উপাচার্য জানিয়েছেন, তিনি অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন।
ভোট আসে ভোট যায়। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান ঘেঁষে এগোয় মিছিল। সাক্ষী থাকে শুধুমাত্র ‘টেগোর’ লেখা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সিংহদুয়ার। ক্যাম্পাসের প্রাচীর ঘেঁষে অস্থায়ী বিপনি। অন্য ফটকগুলির বাইরেও জবরদখল। দেওয়ালজুড়ে রাজনৈতিক এবং বানিজ্যিক পোস্টার। সবমিলিয়ে চূড়ান্ত বিসদৃশ্য দৃশ্য। থমকে দাঁড়ান দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। বিশ্বকবির আঁতুড়ঘরের অবহেলায় অবাক হন সবাই। উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, “কোভিডকালে টানা প্রায় দু’বছর ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার সুযোগে কিছু বিসদৃশ কাণ্ড হয়েছে। কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ঠাকুরবাড়িকে পুরনো অবস্থায় ফেরানো হবে।”
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ঢোকার তিনটি ফটক। পুবদিকের দরজা বহুদিন বন্ধ। তার বাইরে জবরদখল হয়ে গিয়েছে। এখন খোলা হয় দক্ষিণ এবং পশ্চিমদিকের দরজা। দক্ষিণের ফটকের বাইরে ‘মদ ছাড়ান’ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক পোস্টারে ভরে উঠেছে। রবীন্দ্র সরণীর উপর পশ্চিমের ফটকটি সিংহ দরজা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। দু’টি স্তম্ভের দু’দিকে দু’টি ধাতব নেমপ্লেট। একটি অংশ উধাও। রয়ে গিয়েছে শুধু ‘টেগোর’ শব্দটি। যা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যপক শোরগোল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.