কৃষ্ণকুমার দাস: সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) নির্দেশ দিলেও বিধানসভা নির্বাচনের আগেই কলকাতার পুরসভায় (KMC) ভোট করতে চায় না রাজ্য সরকার। সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রশাসকমণ্ডলীর বদলে শীর্ষ আদালতের আগেই পুরসভায় রাজ্যের তরফে ‘স্পেশ্যাল ইনডিপেন্ডেন্ট অফিসার’ নিয়োগের ভাবনা শুরু করেছে নবান্ন (Nabanna)। তাই কলকাতা পুরসভার দায়িত্ব রাজ্যের ‘বিশ্বস্ত ও ভরসাযোগ্য’ কোনও আইএএস অফিসারের হাতে দিতে চাইছে প্রশাসনের শীর্ষমহল।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ পুরভোটের নির্ঘণ্ট জানানোর যে নির্দেশ দিয়েছে, তার আগেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিষয়টি নিয়ে আইন দপ্তরের মতামত নেওয়া হচ্ছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম শনিবার জানান, “করোনা সংক্রমণের সর্বশেষ পরিস্থিতির সঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের চলতি কর্মসূচি, দু’টি বিষয়ই রাজ্য নির্বাচন কমিশন (State election Commission) এবং সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হবে।” পুরমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট, দলের শীর্ষমহলের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে কলকাতা পুরভোটের মতো ‘টাফ-গেম’-এর দায়ভার নিতে চাইছে না রাজ্য সরকার।
করোনা পরিস্থিতি চলতি বছর স্থগিত হয়েছে পুরভোট। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সাতদিনের মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ভোটের নির্ঘণ্ট জানাতে নির্দেশ দিয়েছে। বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও বিদায়ী ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের মত শাসকদলের একটা বড় অংশই মহানগরে এখনই পুরভোট গ্রহণের পক্ষে। কিন্তু ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর ও শহরের প্রভাবশালী বিধায়কদের একাংশ বিধানসভা ভোটের আগে পুরনির্বাচনের বিরুদ্ধে। আত্মবিশ্বাসী ফিরহাদদের যুক্তি, এখন নির্বিঘ্নে ভোট হলেও ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০০’র বেশি আসনে নিশ্চিত জিতবে তৃণমূল, যা বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদলের পালে হাওয়া লাগাতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন ভোটমুখী নেতারা।
কিন্তু এখনই পুরনির্বাচনের বিরোধী যাঁরা, তাঁদের যুক্তি, শহরে ১৪৪ ওয়ার্ডেই তৃণমূল প্রার্থীরা জিততে চাইবেন। সেক্ষেত্রে কোনওমতেই ‘নির্বিঘ্নে’ পুরভোট করা সম্ভব হবে না। যদি কিছু ওয়ার্ডে পুরভোটের দিন হিংসা হয় এবং তা সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে, তবে তা রাজ্য রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। বিরোধী বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচারের বড় অস্ত্র পেয়ে যাবে। বস্তুত এই যুক্তিতে কলকাতায় পুরভোট এখনই করতে না চাওয়ার পক্ষে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সওয়াল করেছে ভোটকুশলী পিকে’র দপ্তর। নবান্ন সূত্রে খবর, হিংসা ছাড়া পুরভোট নিয়ে প্রবল সংশয় থাকায় ভোটকুশলীর যুক্তি মেনে নিয়ে এখননি শহরে নির্বাচনে যেতে চাইছে না রাজ্য সরকার। এছাড়াও কলকাতা পুরসভায় নির্বাচন হলে সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের অন্য পুরসভাগুলিতেও ভোট করার দাবি উঠবে।
তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে করোনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-সহ নানা পরিষেবা মূলক যে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে পুরসভা, সেসব নির্বিঘ্নে বজায় রাখতে একজন বিশ্বস্ত অফিসারকে দায়িত্ব দিতে চায় নবান্ন। সেই অফিসারের মাধ্যমে পুরমন্ত্রী ভোট ঘোষণার দিন পর্যন্ত পুরসভায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট শেষ শুনানিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, পুরনির্বাচনের নির্ঘণ্ট না জানালে আদালতই স্পেশ্যাল অফিসার বসিয়ে দেবে। নবান্নের আশঙ্কা, সেই সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসার ছোট লালবাড়ির আরেকজন ‘ধনকড়’ হয়ে উঠতে পারেন। তাই কমিশনকে নির্বাচনী নির্ঘণ্টের পরিবর্তে ‘স্পেশ্যাল ইনডিপেন্ডেন্ট অফিসার’ বসানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিল নবান্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.