ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক যেন কিছুটা ফিকে। আপাতত যত তরজা, বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে। চিঠি, পালটা চিঠি, প্রমাণস্বরূপ চিঠি – এসব নিয়ে রাজনীতির পারদ ক্রমশই চড়ছে। বাড়ছে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে চোরা সংঘাতও। শনিবারের সকালটা শুরু হয়েছিল বঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে রাজ্যের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কড়া চিঠি পেয়ে। বিকেলে একগুচ্ছ চিঠি বের করে অমিত শাহর অভিযোগ খারিজের পালটা প্রমাণ দাখিল করল নবান্ন। সাংবাদিক সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সেই চিঠির প্রমাণ তুলে ধরে বোঝালেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলায় ফেরাতে আগে থেকেই তৎপর হয়ে কাজে নেমেছে রাজ্য সরকার।
শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠান। যেখানে তিনি সাফ অভিযোগ তোলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রমিকদের ফেরানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রকে সাহায্য করছেন না। তাঁর দাবি, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় ফেরাতে রেল যে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে, তা এ রাজ্যে প্রবেশে অনুমতি দিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী। ভিনরাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে বলেও চিঠিতে অভিযোগ জানান তিনি। সেই চিঠি ঘিরে দিনভর চলে চাপানউতোর। শাসকদলের নেতানেত্রীরা এ বিষয়ে পালটা প্রতিক্রিয়া দেন। তবে প্রশাসনের তরফে তখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
কেন্দ্রের চিঠি নিয়ে এদিন বিকেলে প্রতিক্রিয়া দিল নবান্ন। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ দিয়ে বোঝালেন, অমিত শাহর অভিযোগের ভিত্তি নেই। রাজ্য অনেক আগে থেকেই অন্যান্য রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের ফেরাতে সেসব রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়েছে। গত ৩ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে চিঠি দেওয়ার কাজ। কেরল, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও রাজস্থান সরকারকে নবান্নের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেসব রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের ফেরাতে চায়। সেইমতো ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনের সময়সূচিও বিস্তারিত জানিয়ে আবেদন করা হয়েছিল যে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি যেন শ্রমিক ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রয়োজন বুঝে আরও ১০টি ট্রেন চাইল রাজ্য।
গত তিন তারিখ কেরল এবং রাজস্থান সরকারকে চিঠি পাঠায় নবান্ন। আর সাত তারিখ চিঠি পাঠানো হয় তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটক সরকারের কাছে। মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা নিজে সেসব চিঠি পাঠান। প্রতিটি চিঠিতে রয়েছে একই ধরনের আবেদন। তাহলে কীসের ভিত্তিতে কেন্দ্র এই অভিযোগ তুলছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে উদ্যোগী নয় নবান্ন? সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের বক্তব্য, অমিত শাহর চিঠি নিয়ে তিনি কিছু বলবেন না। তিনি শুধুমাত্র রাজ্যের ভূমিকাটুকুই বিস্তারিত জানাতে পারেন।
এর পাশাপাশি বিদেশে আটকে থাকা এ রাজ্যের বাসিন্দাদের ‘বন্দে ভারত মিশন’এর মাধ্যমে বিমানে ফিরিয়ে আনায় সায় দিয়েছে রাজ্য সরকার, জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। বিদেশ ফেরত উদ্ধারকারী বিমান এবার নামতে পারবে কলকাতা বিমানবন্দরেই। এছাড়া ইন্দো-বাংলাদেশ বাণিজ্যের জন্য সড়কপথের উপর নির্ভর না করে গেদে সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য ট্রেন চালানোরও প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.