অর্ণব আইচ: বেশভূষা বদলেও শেষরক্ষা হল না। বিজেপির নবান্ন অভিযানে ACP দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তার আরও দুই। তাঁদের মধ্যে একজন পেশায় গৃহ শিক্ষক। ইতিমধ্যেই নবান্ন অভিযানের নামে মধ্য কলকাতার মহাত্মা গান্ধী রোডে পুলিশকর্তাকে ‘গণপিটুনি’ ও পুলিশের গাড়ি আগুনে ভস্মীভূত করার অভিযোগে ৩০ জন বিজেপি কর্মীকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।
বিজেপির নবান্ন অভিযানকে (Nabanna Rally) কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর। এসিপি দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। হাত ভেঙে যায় তাঁর। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। এসিপিকে মারধর ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরানোর ১৩ সেপ্টেম্বর থেকেই ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় বেশ কয়েকজনকে। বৃহস্পতিবার সেই ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম রাজকুমার মাইতি ও বিকাশ ঘোষ। জানা গিয়েছে, রাজকুমার পেশায় গৃহশিক্ষক। থাকতেন দমদমে। তবে তার আসল বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এসিপিকে মারধরের পরই পূর্ব মেদিনীপুরে চলে যায় রাজকুমার। স্থানীয়দের নাকি বরাই করে বলেছিলেন পুলিশকে মারধরের কথা! তবে তিনি ভাবতেও পারেননি জল এতদূর গড়াবে। তবে ধরপাকড় শুরু হতেই টনক নড়ে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে কেটে ফেলেন চুল, গোঁফ। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। অবশেষে পুলিশের জালে রাজকুমার। একইভাবে আত্মগোপন করতে নেড়া হয়ে গিয়েছিল বিকাশও। গতকাল কুলতলি (Kultali) থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ি জ্বালানোর ঘটনায় প্রথমে অভিজিৎ রায় নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার রাজারহাটের চাঁদপুর থেকে মহম্মদ হাসান, কেনা সর্দার, ভরত সর্দার, রাজেশ সর্দার, শংকর সর্দার, দক্ষিণ কলকাতার গড়ফার প্রসন্ন দাস রোড থেকে দীপ সরকার, উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাণীপুর থেকে বিনয়কুমার সাহাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বিজেপির নবান্ন অভিযানের দিন যারা তাণ্ডব চালিয়েছিল, সিসিটিভি ও বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ থেকে তাদের শনাক্তকরণ করা শুরু হয়। এর পর কলকাতা পুলিশের কাছে দশটি ই-মেল আসে। ফেসবুক-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় লালবাজার ও পদস্থ আধিকারিকদের কাছে প্রচুর ছবি ও নাম আসতে থাকে। তারই ভিত্তিতে একটি বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে অভিযুক্তদের চিহ্নিতকরণ শুরু হয়।
‘ক্রাউড সোর্সিং’-এর সাহায্যেই পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, কলকাতা ও তার শহরতলি ছাড়াও নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার জেলা থেকে যে বিজেপি কর্মীরা এসেছেন, তাঁদের মধ্যেই ছিল তাণ্ডবের অভিযুক্তরা। দেখা যায়, পুলিশের গাড়িটি প্রথম ভাঙচুর করা শুরু হয়। এর পর তেলের ট্যাঙ্কের মুখের কাছে দীপ সরকার লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে গাড়ি জ্বলে ওঠে। কয়েকজন জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও পুটু-সহ কয়েকজন বাধা দেয়। অন্যরা আগুন জ্বলতে সাহায্য করে। এদিন সাত ধৃতকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাদের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। বাকিদের গ্রেপ্তার করার জন্য পাঁচটি জেলায় তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.