সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন ঠাকুর দেখতে। কিন্তু বাড়ি আর ফেরা হল না বেঙ্গালুরুর তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অভিষেক মণ্ডলের। বয়স ৩১। তবে অভিষেকের মৃত্যু রহস্যজনক ঠেকছে পুলিশের কাছে। সেখানেই উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
তিনজন বন্ধুর সঙ্গে নবমীর দিন অভিষেক ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন।ওই রাতেই মারাত্মক জখম অবস্থায় তাঁকে বন্ধুরা ভরতি করে দেন বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভরতি থাকা অভিষেকের মৃত্যু হয় রবিবার রাতে। সোমবার তাঁর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয় আর জি কর হাসপাতালে। এরপর থেকেই অভিষেকের মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করে। উঠতে থাকে নানা প্রশ্ন। বন্ধুদের বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় ডেকে জেরা শুরু করে পুলিশ।
ইতিমধ্যে সোমবার অভিষেকের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চেয়ে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনার সঙ্গে দেখা করেন তাঁর প্রতিবেশী-বন্ধু ধূর্জটি মুখোপাধ্যায়, জয়ন্ত বিশ্বাস, শুভদীপ চট্টোপাধ্যায় ও সুমন চট্টোপাধ্যায়। পুলিশ কমিশনার তাঁদের আশ্বস্ত, “বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। মঙ্গলবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে ভারত-বাংলাদেশের ফুটবল ম্যাচ থাকায় আমরা সকলেই খুব ব্যস্ত। এই ম্যাচ মিটে গেলেই বিষয়টি নিয়ে দেখব আমি।” বুধবার এবিষয়ে লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখতে আমি বিধাননগর (দক্ষিণ) থানাকে নির্দেশ দিয়েছি। এরপরই অভিযুক্ত গাড়িকে আটক করা হয়।”
ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় সঠিক তদন্তের দাবি তুলে অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত অভিষেকের বাবা বিদ্যুৎ মণ্ডল এবং প্রতিবেশী সঞ্জয় মিত্র। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তাঁরা জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। নিউটাউনের বাসিন্দা ছিলেন অভিষেক। তাঁর আসল বাড়ি দুর্গাপুরে। বাবা বিদ্যুৎ মণ্ডল আর জি কর হাসপাতালের কর্মী। কয়েক বছর ধরেই তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। মা জয়শ্রী মণ্ডলও একটি সময় বেঙ্গালুরুতে চাকরি করতেন। বেঙ্গালুরুর একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরির পাশাপাশি দুর্গাপুরে কাকার সঙ্গে ডাক্তারি সরঞ্জামের ব্যবসাও করতেন অভিষেক। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি।
পুজোর জন্য বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় এসেছিলেন অভিষেকের বন্ধু রনি। এই রনিকেই একটি সময় বেঙ্গালুরুতে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন অভিষেক। সেখানে একটি ঘরে রুমমেট হিসেবে দু’জনে একইসঙ্গে থাকতেন। নবমীর দিন দু’জনে একইসঙ্গে বিধাননগরে ঠাকুর দেখতে যান। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই বন্ধু। পুলিশকে দেওয়া রনির বয়ান অনুযায়ী জানা যায়, বিধাননগর এফডি ব্লকের একটি জায়গায় চারজন একইসঙ্গে মদ্যপান করেন। অভিষেকের মদ্যপানের পরিমাণটা একটু বেশিই হয়ে যায়। সেই কারণে স্থানীয় একটি পার্কে তিনি ঘুমিয়ে যান। রনি পুলিশকে জানিয়েছেন, “এই অবস্থায় অভিষেককে ছেড়ে আমরা রাতের খাবার খেতে চলে যাই। খেয়ে ফিরে এসে তাকে নিয়ে আমরা বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিলাম। সেই সময় দুরন্ত গতির একটি গাড়ির ধাক্কায় আহত হয় অভিষেক। তাকে আমরা হাসপাতালে ভরতি করে দিই।”
রনির পাসপোর্ট থানায় জমা রাখার পর তাঁকে বেঙ্গালুরুর চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য অনুমতি দেয় পুলিশ। রনির এই বয়ান সঠিক নয় বলে দাবি তুলেছেন মৃত অভিষেকের বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা। অভিষেকের বন্ধু ধূর্জটি মুখোপাধ্যায় জানান, “পুলিশকে রনি বলে গিয়েছিল যে তদন্তে সমস্তরকমভাবে সহযোগিতা করবে। কিন্তু কলকাতা ছাড়ার পর তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ছিল সুইচড অফ।” প্রতিবেশী সঞ্জয় মিত্র জানান, “দুর্ঘটনাস্থল থেকে ওই বেসরকারি হাসপাতালের দূরত্ব বড় জোর দুই কিলোমিটার। সেখানে পৌঁছতে রনিদের সময় লেগেছিল একঘণ্টা। এই বাকি সময় তাহলে তারা কোথায় ছিল?” ঘটনাস্থলে কোনও সিসিটিভি ছিল না। তাই তার ফুটেজ না পাওয়ায় তদন্তে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়েছে পুলিশ। এছাড়া ঘটনার সময় গাড়ির গতি ছিল ঘন্টায় ৮০-৮৫ কিলোমিটার। প্রশ্ন উঠেছে, ওই গতির গাড়ির ধাক্কায় তাহলে শুধুমাত্র অভিষেকের মাথায় আঘাত লাগল কেন? সারা শরীর অক্ষত রইল কেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.