অঙ্কন: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
গোবিন্দ রায়: অভিযুক্ত কথা বলতে পারে না, কানেও শুনতে পায় না। অভিযোগকারিণীও তা-ই। অথচ অপরাধ গুরুতর, একেবারে ধর্ষণের (Rape)অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। কিন্তু যেখানে দু’পক্ষই মূক-বধির, সেখানে তদন্ত এগোবে কীভাবে? বিশেষত যেখানে নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি জরুরি? অপরাধ প্রমাণে প্রথমে যথেষ্ট বেগ পেতে হলেও শেষমেশ প্রযুক্তির কল্যাণে বাধা কেটে গিয়েছে। দোভাষী যন্ত্র ও বিশেষজ্ঞের সাহায্যে নেওয়া নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দিতেই অভিযোগের সারবত্তা প্রমাণিত হয়েছে, যার ভিত্তিতে ওই মূক-বধির (Deaf and dumb) যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগে তার মতো চার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে বিরল। মঙ্গলবার শিয়ালদহ (Sealdah) আদালতে তোলা হলে আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ধৃতদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত সূত্রের খবর, গত ২ জুলাই ছাতুবাবু লেনে এক মূক-বধির যুবতীকে মারধর ও হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল এন্টালি থানায়। মেয়েটির সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে, পুলিশকে তা বুঝতে হিমশিম খেতে হয়। পরে আদালতে গোপন জবানবন্দিতে মেয়েটি ধর্ষণের অভিযোগ তোলে, এমনকী, কুকর্মের হোতা হিসাবে চারজনকে চিহ্নিতও করে দেয়।
তবে মামলাটি অন্য মাত্রা পায় মূক-বধির মেয়েটির গোপন জবানবন্দি ঘিরে। সাধারণত এ ধরনের যৌন নিগ্রহ মামলায় নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি ম্যাজিস্ট্রেট নেন, তৃতীয় কোনও ব্যক্তির উপস্থিতি নিষিদ্ধ। এই মামলায় নির্যাতিতা যেহেতু অপরের কথা শুনতে বা বলতে অপারগ, তাই বাধ্য হয়ে সাহায্য নিতে হয়েছে দোভাষী যন্ত্রের, যার মাধ্যমে মূক-বধিরদের মুখ নিঃসৃত সাধারণের অবোধ্য ভাষা লিপিবদ্ধ হয়। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ তা বুঝতে পারেন। তেমন এক বিশেষজ্ঞকে জবানবন্দি কক্ষে রাখা হয়েছিল। তিনিই অভিযোগকারিণীর বক্তব্য বিচারককে বুঝিয়ে দেন।
সেই বয়ানের ভিত্তিতে সোমবার রাজীব গুহ, দিলীপ বালা, তন্ময় মালাকার ও জয়ন্ত ভট্টাচার্য নামে চার যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারাও মূক-বধির, এবং একই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় অভিযোগকারিণীর পূর্বপরিচিত। এদিন ধৃতদের আদালতে তোলা হলে পুলিশ হেফাজতের আবেদনে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, “তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে। নির্যাতিতার বয়ানের ভিত্তিতে এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সত্য উদঘাটনে ধৃতদের হেফাজত প্রয়োজন।” ধৃতদের আইনজীবী জামিনের আবেদন জানান। সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.