স্টাফ রিপোর্টার : গরম বাড়ছে। মাম্পস বাড়ছে! ফি বছরেই খুদেরা আক্রান্ত হয় মাম্পসে (Mumps)। কিন্তু এবার যেন প্রায় সব বাচ্চারাই সংক্রমিত হচ্ছে। মূলত ভাইরাস ঘটিত রোগ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ৫-১২/১৩ বছরের বাচ্চারা। তথ্য বলছে অসুস্থ শিশুদের প্রতি দশ জনের মধ্যে ৪-৫জন ভুগছে মাম্পসে।
গত কয়েকমাসে কেরল, মহারাষ্ট্র, গুজরাটে চোখ রাঙিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে কলকাতা-সহ দুই ২৪পরগনায় কার্যত আতঙ্ক তৈরি করেছে মাম্পস। অবস্থার গুরুত্ব বুঝে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে অবিলম্বে “এমএমআর (মাম্পস, মিজিলস ও রুবেলা ) ভ্যাকসিন নিখরচায় সব শিশুদের দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পেডিয়াট্রিক্স আসোসিয়েশন।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন রোগ জটিল হলে ছেলেদের অণ্ডকোষ এবং মেয়েদের জরায়ু ফুলে যেতে পারে। ভবিষ্যতে সাময়িক বন্ধ্যাত্বও দেখা দিতে পারে।
মাম্পসের লক্ষণ হল, বাচ্চাদের জ্বর হবে, সঙ্গে গালের ডান অথবা বাঁদিক ফুলে যায়। ব্যথায় কাঁদতে থাকে। বাচ্চার গিলতে কষ্ট হয়। খেতে পারে না। এমনকী ঢোক গিলতেও কষ্ট হয়। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের সভাপতি ডা. জয়দেব রায় বলেছেন, “ডান অথবা বাঁ দিকের চোয়ালের ঠিক নচে প্যারোটিড গ্ল্যান্ড ফুলে যায় মাম্পস ভাইরাস সংক্রমণের ফলে। তখনই জ্বর, গলা ও গালে ব্যথা হয়।” জয়দেববাবুর কথায়,“ফি বছরই বাচ্চারা মাম্পসে আক্রান্ত হয়। কিন্তু এবার মারমুখী চেহারা নিয়েছে।” আই সিএইচ তো বটেই বিসি রায় শিশু হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক্স বিভাগে রোজ নিয়ম করে মাম্পস উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ শিশুর ভিড় বাড়ছে।
রোগ জটিল হলে ছেলেদের অণ্ডকোষ এবং মেয়েদের জরায়ু ফুলে যেতে পারে। অনেক সময় সাময়িক জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের আওতায় এমআর (মিজিলস ও রুবেলা) ভ্যাকসিন নিখরচায় দেওয়া হয়। কিন্তু ম্যাম্পসের ভ্যাকসিন দেওয়ার কোনও রেওয়াজ নেই। শিশুর জন্মের ৯ এবং ১৫ মাস বয়সে দুটি এম আর টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে একইসঙ্গে মিজিলস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা.মানস বাগচী বলছেন, “সরকারি ব্যবস্থাপনায় মিজিলস ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না, কিন্তু বাচ্চার স্বার্থে আমরা এমএমআর ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করি। শিশুর বয়স পাঁচ বছরে এই ভ্যাকসিন একটি ডোজ শিশুর সুরক্ষার বর্ম হিসাবে কাজ করে।
কী করণীয়?
১) বাচ্চা সংক্রমিত হলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। যাতে আর কোনও বাচ্চা সংক্রমিত না হয়। নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই। জ্বর হলে প্যারাসিটামল বা প্যারাসেফ জাতীয় ওষুধ খেতে হবে।
২) চিবিয়ে খেতে কষ্ট হয়, তাই ‘সেমি সলিড’ খাবার খেতে হবে।
৩) মোটামুটি ৭-১০দিনের মধ্যে বাচ্চা সুস্থ হয়। কিন্তু গালের বাইরে লাল হয়ে ওঠা অথবা ছেলেমেয়েদের অণ্ডকোষ , জরায়ু ফুলে ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় মাম্পসের ফলে প্যানক্রিয়াস আক্রান্ত হয়। তাই সংক্রমণের শুরুতেই অতিরিক্ত সাবধানতা নিতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.