Advertisement
Advertisement
এমআর বাঙুর

নিয়মিত রোগীদের অভিযোগ শুনছেন স্বয়ং সুপার, অভিনব উদ্যোগ এমআর বাঙুর হাসপাতালের

সুপারের ভূমিকায় খুশি রোগীর পরিবার।

MR Bangur hospital chief announces campaign to address grievances
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:February 19, 2020 10:48 am
  • Updated:February 19, 2020 10:48 am  

গৌতম ব্রহ্ম: সুপারের দেখা পেতে রোগীর পরিজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হত্যে দিয়ে পরে থাকতে হবে, জেলা হাসপাতালে এটাই দস্তুর। সুপারের দেখা মিললেও যে সমস্যা পুরোটা জানানোর সুযোগ মেলে, তা-ও নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কথা বলেন সুপারের সহকারী। দরখাস্ত জমা নেন তিনিই।  কিন্তু উলটপুরাণ টালিগঞ্জের এমআর বাঙুর হাসপাতালে। এখানে সুপার নিজেই রোগীর পরিবারের কাছে গিয়ে অভাব-অভিযোগ শুনছেন। খাতায় লিখে নিচ্ছেন। তারপর অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট রোগীর কাছে। টানা এক ঘণ্টা নিয়ম করে রোগীদের মধ্যেই নিজের দরবার বসাচ্ছেন সুপার।

যে কোনও দিন বিকেল পাঁচটা থেকে ছ’টার মধ্যে গেলে এই দৃশ্য দেখা যাবে টালিগঞ্জের এমআর বাঙুর হাসপাতালে। যা কিনা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলা হাসপাতাল। এখানে রোগী দরবারের মধ্যমণি ডা. শিশির নস্কর। যিনি ৭ ফেব্রুয়ারি আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল থেকে বদলি হয়ে বাঙুরে এসেছেন। ৮ তারিখ সুপারের চার্জ বুঝে নিয়েছেন। এবং ৯ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু করে দিয়েছেন ‘সুপারকে বলো’ কর্মসূচি।
বাঙুর সুপারের নয়া উদ্যোগকে এ নামেই ডাকছেন রোগীর পরিবার-পরিজন, হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স-কর্মীরা। মঙ্গলবার হাসপাতালের মেন গেটের দু’নম্বর কাউন্টারে গিয়ে শিশিরবাবুর দেখা মিলল। দু’পাশে দু’জন সহকারী সুপার- রীতেশ মল্লিক ও সাগরচন্দ্র শীট। সামনে ছোট্ট লাইন। সবাই এক এক করে কাউন্টারের জানলা দিয়ে সুপারের কাছে সরাসরি সমস্যা পেশ করছেন। সুপারের নির্দেশে সেগুলি লিখে নিচ্ছেন দুই সহকারী সুপার।

Advertisement

শিশিরবাবু বললেন, “হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেই এই এক ঘণ্টার ‘পেশেন্ট মিট’ শুরু করেছি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. সোমনাথ মুখোপাধ্যায়কেও জানিয়েছি। এগারোশো বেডের হাসপাতাল। মানুষের অভাব-অভিযোগ তো থাকতেই পারে। সেগুলি জানানোর একটা সময় নির্দিষ্ট থাকলে রোগীর পরিবারের অনেক সুবিধা হয়।” জানা গিয়েছে, প্রথম দিন সুপারের কাছে ন’টার মতো অভিযোগ জমা পড়েছিল। আর এ দিন পড়েছে মাত্র তিনটি। শিশিরবাবু জানালেন, অভিযোগগুলিকে মূলত দু’ভাবে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। স্ট্রাকচারাল ও বিহেভেরিয়াল। মানে, পরিকাঠামোগত ও ব্যবহারগত। উদাহরণ হিসেবে জানালেন, মাথার উপর পাখা ঘুরছে না, বাথরুম অপরিষ্কার, বেড নড়বড় করছে-এগুলো হল স্ট্রাকচারাল সমস্যা। আর ডাক্তারবাবু রোগীকে দেখছেন না, নার্স ইঞ্জেকশন দিতে দেরি করছেন, স্যালাইন শেষ হয়ে গিয়েছে, রক্ত বেরোচ্ছে- এগুলো বিহেভেরিয়াল সমস্যা। “আমি এখনও প্রথম শ্রেণির অভিযোগ পাইনি। সবই দ্বিতীয় শ্রেণির।”- জানিয়েছেন ডা. নস্কর।

[আরও পড়ুন: ভুল অ্যাডমিট নিয়েই মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্রে পড়ুয়া, ত্রাতার ভূমিকায় পুলিশ কাকু]

সুপারের উদ্যোগে বেজায় খুশি রোগীর বাড়ির লোক। তাঁদের বক্তব্য, এত দিন সুপারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সুপার অফিসে বসে থাকতে হত। তারপর দেখা করার সুযোগ হলেও কথা বলার সুযোগ মিলত না। কোনও এক অ্যসিস্ট্যান্ট সহকারী বাইরে নিয়ে গিয়ে অভিযোগ শুনতেন। আর এখন সুপার নিজে অফিস ছেডে় বাইরে এসে বসছেন! ভিজিটিং আওয়ারে যে কেউ চাইলেই দেখা করতে পারছে! অন্যান্য জেলা হাসপাতালেও এই ‘বাঙুর-মডেল’ চালু করার দাবি উঠেছে রোগীসমাজে। যা শুনে শিশিরবাবুর প্রতিক্রিয়া, “বিকেলে এক ঘণ্টা রোগীর পরিবারের কথা শুনি মানে বাকি সময় শুনি না, এমনটা নয়। জরুরি হলে অন্য সময় যে কেউ আমার অফিসে এসে সমস্যার কথা জানাতে পারেন।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement