ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: পুরনো তৃণমূল ভবন (TMC Bhavan) ভেঙে নতুন কর্পোরেট ধাঁচের কার্যালয় তৈরি হচ্ছে তপসিয়ায় ইএম বাইপাসের ধারে। নতুন বাড়িটি হবে চার-পাঁচতলা। থাকবে অ্যানেক্স বিল্ডিং। কনফারেন্স হল থাকবে কয়েকটি। থাকবে নেতাদের থাকার জন্য কয়েকটি ঘর। হবে পার্কিং লট, ক্যান্টিন। সব মিলিয়ে বহরে বেশ বড় হয়েই মাথা তুলবে নতুন ভবন। গত সপ্তাহেই পুরনো বাড়ি ভাঙাচোরার কাজে হাত পড়েছে।
কিন্তু যে দলীয় কার্যালয়ে গত ১৯ বছর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) থেকে প্রবীণ নেতাদের আনাগোনা ছিল, লড়াই-আন্দোলনের অন্যতম সাক্ষী ছিল যে বাড়ি, সেই বাড়ির চিহ্ন কি কোথাও রাখা থাকবে না? এই ভাবনা থেকেই বাড়ির অতীত স্মৃতি, তার নানা ঘরের কোনা-ঘুপচি, সেখানকার আসবাব- সবটাই ছবিতে ধরে রাখার পরিকল্পনা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সূত্রের খবর, তিনতলা তৃণমূল ভবন ভাঙার আগে ভবনের সম্পূর্ণ অংশের ভিডিওগ্রাফি হয়েছে। এখান থেকেই তৈরি হবে স্মরণিকা।
পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি করতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যাবে বলেই অনুমান নেতৃত্বের। ততদিন অফিস চালানোর মতো অস্থায়ী একটি কাঠামো বানানো থাকবে পুরনো ভবনের পাশেই। পুরনো ধাঁচে গড়া এ বাড়ির গঠন অত্যন্ত মজবুত। বাড়ির একতলায় ছিল মূল অফিসঘর। বাইরের এই ছোট ঘরে শীর্ষ নেতাদের কেউ না কেউ দিনের বেশিরভাগ সময়েই থাকতেন। তার লাগোয়াই ছিল অন্যান্য শাখা সংগঠনের নেতৃত্বের ঘর। সঙ্গে একটি বড় হলঘর, ছোটখাটো বৈঠকের জন্য। ফলে কর্মীদের ভিড় লেগেই থাকত। ২০২১-এ বিপুল জয়ের পর থেকে সে ভিড় আরও বাড়ে।
দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠেই একইভাবে নেতৃত্বের বসার বা কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের একটি ঘর ছিল। লাগোয়া আরও দু-একটি শাখা সংগঠনের ঘরের পাশেই ছিল চেয়ারপার্সন তথা তৃণমূলনেত্রীর অফিসঘর। তারই সঙ্গে বড় হলঘর। বিভিন্ন সময় দোতলা ও একতলায় এই বড় ঘরগুলিতেই সাংবাদিক বৈঠক হয়েছে। তিনতলায় থাকার ঘর ছিল দুটি। তার মধ্যে একটি দলনেত্রীর নিজের। সে ঘরে তাঁর আসবাব, জরুরি কাগজপত্রের সঙ্গে ইষ্টদেবতারাও ছিলেন। প্রতিদিন তাঁদের পুজো হত। যতবার মমতা বা অভিষেক এ বাড়িতে এসেছেন, নিজে হাতে পুজো দিয়ে গিয়েছেন তাঁদের। বাড়ি ভাঙার আগে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে কালীঘাটে নেত্রীর বাড়িতে। পাশেই ছিল আরও একটি ঘর। এক রাজ্য নেতার কথায়, “বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই বাড়ি। বলা যায়, বহু আন্দোলনের দলিল-দস্তাবেজ। নেত্রীর প্রতিদিনের কর্মসূচি, অন্য নেতৃত্বের আনাগোনা, নানা নির্বাচনী প্রস্তুতি, নতুন নেতৃত্বের তৈরি হওয়া, অন্য দল থেকে এ দলে যোগদান সব কিছুর সঙ্গে জড়িত ছিল এই বাড়ি।”
গোটা ভবনের ভিডিওগ্রাফি করে রাখা হয়েছে। তাতে স্থান পেয়েছে সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া লক্ষ্মীপেঁচাটিও। আপাতত সে সুস্থ। রয়েছে বিধাননগরে বন দপ্তরের হেফাজতে। এই সবটা নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি তথ্যচিত্র বানাচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতি বছরই ২১ জুলাই দলের শহিদ দিবসের কর্মসূচিতে পুরনো দিনের আন্দোলনের ছবি বা ভিডিও স্থান পায়। এই তথ্যচিত্র প্রস্তুত হয়ে গেলে, সেটিকেও দলীয় ইতিহাসের অঙ্গ হিসাবে ওই কর্মসূচিতে তুলে ধরা হয় কি না, সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.