শুভঙ্কর বসু: বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলাচ্ছে অপরাধ দুনিয়াও।
বিশেষত নারীঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া। শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো অপরাধের ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ‘ভিলেন’ ফেসবুক। এমনটাই মনে করেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। আর সে কারণেই রাজ্যের সাইবার থানাগুলিতে ফেসবুক সংক্রান্ত অভিযোগের পাহাড় জমেছে। রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই মহিলাঘটিত সাইবার অপরাধে ফেসবুকের রমরমা।
আর এহেন অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। কিন্তু কেন এই অবস্থা? তদন্তকারীদের অভিযোগ, তদন্ত করতে গিয়ে ন্যূনতম তথ্য মিলছে না ফেসবুক কর্তৃপক্ষের তরফে। ফলে অপরাধীকে শনাক্ত করা গেলেও তথ্যের অভাবে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে অপরাধী। থমকে যাচ্ছে মামলা। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য না মেলায় শিলিগুড়ি সাইবার ক্রাইম থানায় অন্তত ২৩টি মামলার তদন্ত এভাবেই ঝুলে রয়েছে। গত ছয় বছরে কলকাতায় ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে কয়েক হাজার গুণ।
ফেসবুক সংক্রান্ত মামলার সিংহভাগই মহিলাদের সম্পর্কে কুৎসা বা অশালীন ছবি পোস্ট সংক্রান্ত অভিযোগ। অভিযোগকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধীকে আটক বা গ্রেফতার করা হচ্ছে ও যে ডিভাইস থেকে ওই অশালীন পোস্ট করা হচ্ছে তা-ও বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আদালতে অপরাধ প্রমাণ করার সময় হোঁচট খাচ্ছেন তদন্তকারীরা। কারণ এইসব ক্ষেত্রে অপরাধীকে শাস্তি দিতে গেলে প্রয়োজন ফেসবুক কর্তৃপক্ষের একটি রিপোর্ট ও যে ডিভাইস থেকে ওই ধরনের পোস্ট করা হচ্ছে তার আইপি অ্যাড্রেস। কিন্তু, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেই তথ্য দিয়ে আদৌ সহযোগিতা করছে না। ফলে সহজেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত।
ফেসবুক সংক্রান্ত সাইবার মামলায় এক তদন্তকারী আধিকারিকের কথায়, আধুনিক যুগে বহু মামলাতেই শুধু মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার নয়, ফেসবুক বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া অপরাধের একটা অংশ হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে তাদের সহায়তা ছাড়া তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। ফলে ছাড়া পেয়ে যান অভিযুক্ত। কখনও আবার তথ্যপ্রমাণের অভাবে গ্রেপ্তার করা যায় না অভিযুক্তকে। এপ্রসঙ্গে সরকারি কৌঁসুলি শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ফেসবুক একটি বিদেশি কোম্পানি। তারা এখানে ব্যবসা করছে। বেশিরভাগ সময়ই তারা আমাদের দেশের আইন মানছে না। আইন মেনে নোডাল অফিসার মারফত কুরুচিকর ও অশ্লীল পোস্ট তাদের সরিয়ে ফেলা বা ব্লক করার জন্য তাদের বলা হলেও তারা তা করছে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.