কলহার মুখোপাধ্যায়: প্রথমে করোনা। তারপর আমফান। এবার তাতে যোগ হল প্রবল বৃষ্টির জমা জল। আর তার জেরে ডেঙ্গু বাড়ার সম্ভাবনা। এই ত্র্যহস্পর্শ যোগে নাভিশ্বাস দশা প্রায় গোটা রাজ্যের। তবে কোমর বেঁধে নেমেছে প্রশাসনও।
শুক্রবার আমফান উদ্ধারকাজ, করোনা মোকাবিলা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বৈঠক করেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। সেখানে তিনি এই তিনটি বিষয় নিয়ে আপৎকালীন ভিত্তিতে কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করবেন পুরকর্মীরা। মন্ত্রী বলেছেন, “একটি প্রাণও অকারণে এবং অকালে না চলে যায় তা নির্দিষ্ট করতে হবে।” বৈঠকের পর জানা গিয়েছে, হাইপোক্লোরাইট স্প্রে করে করোনার জীবাণু মারার কাজ আরও বাড়ানো হবে। এই একই রাসায়নিকের প্রভাবে মশার লার্ভাও বিনষ্ট হবে। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসক অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা নাগরিকদের সচেতন করবেন। কোথাও যাতে জল না জমতে পারে তা নির্দিষ্ট করতে হবে।”
কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু জায়গায় এখনও জল জমে থাকার খবর আসছে। দ্রুত তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজও চলছে। তবে ছাদের উপর থাকা টব, ফেলে রাখা টায়ার, মাটির পাত্র ইত্যাদিতে যাতে জল না জমে থাকে, তার জন্য নাগরিকদের সচেতন করার প্রচার আরও বেশি করে চালানো হবে এই বিপদের পরিসিস্থিতে। পাত্রে জল জমে থাকা জলেই ডেঙ্গুর মশা বংশবৃদ্ধি করে। তা আটকাতে সমস্ত পুরসভাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন পুরমন্ত্রী। বিধান নগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “ডেঙ্গুর দমনে অতিরিক্ত সর্তকতা নেওয়া হয়েছে। জমা জলে ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। অধিকাংশ জায়গায় সরানো সম্ভব হলেও কয়েকটি এলাকাতে এখনও কিছু জল জমে রয়েছে। সেখানে যাতে ডেঙ্গুর মশা বংশবৃদ্ধি না করতে পারে তার জন্য মশার তেল এবং ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণে। দক্ষিণ দমদম এবং দমদম পৌরসভা করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি ডেঙ্গু দমনে বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।”
চলতি মাসেই রাজ্যের পুরসভাগুলির সঙ্গে বৈঠকে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী। সেই অনুযায়ী কর্পোরেশন ও পুরসভাগুলি নানা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু বুধবারের আমফান সব হিসেব ওলট-পালট করে দিয়েছে। টানা রেকর্ড বৃষ্টিতে জলমগ্ন অনেক এলাকা। কলকাতা, বিধান নগর থেকে শুরু করে সংলগ্ন পুরসভা এলাকার বহু জায়গা ধুয়ে সাফ করে দিয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়। যার জেরে এখনও বেশ কিছু অংশে জল জমে রয়েছে। লাগাতার পাম্প চালিয়ে অধিকাংশ এলাকা জলমুক্ত করার পরও কিছু কিছু নিচু অঞ্চলে এখনও জল জমে থাকার খবর মিলেছে। এই জমা জল মশার বংশ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। তাই আমফান উদ্ধারকাজ, করোনা মোকাবিলার সঙ্গেই ডেঙ্গু দমনে অতিরিক্ত সক্রিয়তা জারি রাখছে পুরসভাগুলি। বর্ষার প্রারম্ভে এই সর্তকতা আখেরে জীবনহানি রুখে দেবে বলে আশাবাদী পুর-প্রশাসন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.