গোবিন্দ রায়: মৃত্যুর এক বছর কেটে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও সৎকার হয়নি বৃদ্ধার! কারণ তিনি ভিনধর্মের লোকের বাড়িতে ছিলেন এবং সম্পত্তি নিয়ে চলছিল টানাপোড়েন! এমন মামলায় বিস্ময় প্রকাশ করে কলকাতা হাই কোর্ট। মামলায় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, অবিলম্বে সৎকার করতে হবে বৃদ্ধার। পরিবার ব্যবস্থা করতে না পারলে প্রয়োজনে সৎকার করবে রাজ্য। হাই কোর্ট (Calcutta HC) আরও জানায়, সম্ভব হলে বৃদ্ধার ময়নাতদন্তও করা হবে।
জানা গিয়েছে, কাটোয়ার বাসিন্দা রমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও হয়নি তাঁর সৎকার। গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি রমাদেবীকে হাসপাতালে ভরতি করেন নূর হক। প্রায় ন’বছর ধরে রমাদেবীর দেখভাল করতেন নূর হক ও তাঁর পরিবার। হাসপাতালে ভরতির দু’দিন পর মৃত্যু হয় রমাদেবীর। তাঁকে যে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল, সে কথা রোগীর আত্মীয়া মায়া মজুমদারকে এসএমএস করে জানিয়েছিলেন নূর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও রমাদেবীর মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে জানায়। সেই সঙ্গে এও জানা যায়, মায়া মজুমদার একদিনও রমাদেবীকে দেখতে যাননি হাসপাতালে।
সেই বৃদ্ধার সৎকার নিয়েই তাঁর নিকট আত্মীয় মায়া মজুমদার একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, রমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির উত্তরাধিকারী তিনি। অথচ তাঁর বদলে রমাদেবীর পরিচিত নূর হক মল্লিক যাবতীয় সম্পত্তি পেয়েছেন। মায়া মজুমদারের অভিযোগ, ভুল পথে ওই সম্পত্তি পেয়েছেন নূর হক। কীভাবে রমাদেবীর মৃত্যু হল, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন মায়া। এমনকী সিবিআই তদন্তের দাবিও জানান।
আত্মীয়র যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। সঙ্গে বলেন, যিনি ওই বৃদ্ধার দেখভাল করতেন, সেই নূর হকের উপরই আস্থা রয়েছে আদালতের। তবে নূর হক রমাদেবীর পরিবারের সদস্য না হওয়ায় তাঁর দেহ তুলে দেয়নি হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ। আবার সম্পত্তির টানাপোড়েনের জেরে পরিবারের লোকও রমাদেবীর দেহ বাড়ি ফেরানোর তাগিদ দেখায়নি। সব মিলিয়ে আটকে থাকে তাঁর শেষকৃত্য।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানির পর যাবতীয় জট কাটে। এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি। রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অন্য সম্প্রদায়ের পরিবারে বৃদ্ধা এতদিন কাটিয়েছেন বলে সৎকার করার ইচ্ছা নেই। এই বয়ানের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.