Advertisement
Advertisement

Breaking News

ঠাকুরপুকুরে উদ্ধার ১০ সদ্যোজাত, ধৃত হোমের মালিক

বাদুড়িয়ার শিশুপাচার চক্রের জাল ছড়িয়েছে খাস শহর কলকাতাতেও৷

More arrests in Baduria child trafficking case
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 25, 2016 9:08 am
  • Updated:November 25, 2016 9:08 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাদুড়িয়ার শিশুপাচার চক্রের জাল ছড়িয়েছে খাস শহর কলকাতাতেও৷ শিশুপাচার চক্রের তদন্তে নেমে এবার ঠাকুরপুকুরের একটি হোম থেকে উদ্ধার হল ১০ সদ্যোজাত৷ গ্রেফতার করা হয়েছে হোমের মালিক রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ একইসঙ্গে আটক করা হয়েছে ৩ মহিলাকর্মীকেও৷ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সিআইডি টিম তল্লাশি চালায় বদরা রোড, কলাগাছিয়া এলাকায়৷ ‘পূর্বাশা’ নামে মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধদের একটি হোম থেকে ১০ সদ্যোজাতকে উদ্ধার করে সিআইডি৷ ওই ১০ জনই কন্যাসন্তান বলে জানিয়েছে সিআইডি৷ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুদের রাখা হয়েছিল৷ সিআইডি তাদের উদ্ধার করার পর একটি হাসপাতালে পাঠিয়েছে৷ সিআইডির এক আধিকারিক জানিয়েছেন, হোমের তিনতলার ঘর ভাড়া করে চলত শিশু পাচার৷ বাচ্চাদের কান্না থামাতে কাপড়ের দোলনা ব্যবহার করা হত৷ মশা তাড়ানোর জন্য পোড়ানো হত ডিম রাখার ট্রে৷ গত ১০ নভেম্বর বাদুড়িয়ার ঘটনায় এক অভিযুক্ত এই শিশুদের এই হোমে স্থানান্তরিত করে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সূত্রে খবর, ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত পুতুলের সূত্র ধরেই এই ডেরার সন্ধান মিলেছে৷

(শিশু পাচার চক্রের অন্যতম চাঁই কলকাতার এক চিকিৎসকও)

বৃহস্পতিবারই কলেজ স্ট্রিটের একটি নার্সিংহোমের মালিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়৷ বৃহস্পতিবার রাতে রাজাবাজার এলাকার এক বহুতল থেকে পার্থকে গ্রেফতার করা হয়৷ কলেজ স্ট্রিটের মতো এলাকায় নিজের নার্সিং হোম থেকে প্রায় ২২ বছর ধরে শিশুপাচার করে আসছিল ধৃত মালিক পার্থ৷ পাশাপাশি হাবড়া থেকেও গ্রেফতার করা হয় মারেফা বিবি নামে এক মহিলাকে৷ মারেফা ধৃত পলির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় পাচারের আগে শিশুদের দেখভাল করত৷ ধৃত চিকিৎসক সন্তোষকুমার সামন্ত ছাড়াও এই কাণ্ডের তদন্তে সিআইডির কড়া নজরে রয়েছেন কলকাতার আরও একজন চিকিৎসক৷ যে ওই অভিযুক্ত নার্সিং হোমের সঙ্গে যুক্ত৷ তাঁকেও গ্রেফতার করতে অভিযান চালান সিআইডির গোয়েন্দারা৷ কিন্তু গ্রেফতারি এড়াতে ওই চিকিৎসক বেপাত্তা৷

Advertisement

(বাদুড়িয়ায় শিশুপাচার চক্রের খোঁজ, ধৃত নার্সিংহোমের মালিক-সহ ৮)

অন্যদিকে, ধৃত কলকাতার চিকিৎসক সন্তোষকুমার সামন্ত, কলেজ স্ট্রিটের নার্সিং হোম মালিকের পুত্রবধূ পারমিতা এবং বেহালার নার্সিং হোমের মহিলা আধিকারিক প্রভা প্রামাণিককে বৃহস্পতিবার বারাকপুর আদালতে তোলা হলে ১২ দিন পর্যন্ত গোয়েন্দা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক৷ বাকি দুই ধৃত পুতুল ও পার্থর ১২দিনের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক৷ ২২ বছর আগে বীরেশ্বরবাবুর মৃত্যুর পর নার্সিং হোমের মালিক হন পার্থ৷ দায়িত্ব নেওয়ার পরেই শুরু হয় শিশুপাচারের কাজ৷ বেশি করে অবৈধ সম্পর্কের জেরে গর্ভপাতের দিকেই জোর দেওয়া হত এই নার্সিং হোমে৷ কারণ তাতে ঝুঁকি অনেক কম৷ লোক জানাজানির ভয়ে অবৈধ গর্ভপাত করিয়ে নিজের সন্তানের আর দায়িত্ব নেয় না কোনও প্রসূতিই৷ সদ্যোজাতকে নার্সিং হোমে রেখেই চলে যায় সকলে৷ এরপর সেই সদ্যোজাতর দায়িত্ব পুরোপুরি নিয়ে নিত নার্সিং হোম মালিক পার্থ ও পুত্রবধূ পারমিতা ওরফে দেবযানী৷ তাদের কাছ থেকে সদ্যোজাতদের কিনে নিত দুর্গানগরের উৎপলা ব্যাপারী ওরফে পলি এবং মছলন্দপুরের সত্যজিত্‍ সিংহ৷ নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অজিত দত্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে সেই সদ্যোজাত শিশুদের চড়া দামে বিক্রি করে দিত তারা৷ পাশাপাশি গর্ভপাত করাতে চাওয়া মহিলাদের অনেকসময় নিজের দুর্গানগরের বাড়িতে রেখেও দিত পলি৷ শিশু বিক্রির টাকায় বাইশ বছরে ফুলেফেঁপে উঠেছিল শ্রীকৃষ্ণ নার্সিং হোমের মালিক পার্থ৷ এমনকী সেই টাকায় রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের কাছে একটি বহুতলে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও কিনেছিল৷ ধৃত পার্থ ছিল ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি৷ নার্সিং হোম থেকে শিশুপাচারের কথা অনেকে জানলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি৷  সিআইডি গোয়েন্দারা তদন্তে নেমে জানতে পেরেছেন, ধৃত চিকিৎসক ডাঃ সন্তোষকুমার সামন্ত ছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ নার্সিং হোমে শিশুপাচারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন আরও এক চিকিৎসক৷ ১৯৯০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই নার্সিং হোমের সঙ্গে যুক্ত থেকে গর্ভপাত এবং শিশুপাচারের কাজ করতেন ওই চিকিৎসক৷ ২০১২ সালের পর ওই চিকিৎসকের পরিবর্তে নার্সিং হোমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়েছিলেন ডাঃ সন্তোষকুমার সামন্ত৷ এক একটি গর্ভপাতে কমিশন বাবদ তিনি পেতেন ৬০-৭০ হাজার টাকা৷ পলি ছাড়াও শিশু বিক্রির ক্ষেত্রে নার্সিং হোমে আরও এক এজেন্টের সন্ধান পেয়েছেন সিআইডির গোয়েন্দারা৷ তার সন্ধানেও শুরু হয়েছে তল্লাশি৷ বৃহস্পতিবার রাতে সিআইডির একটি দল মছলন্দপুরে উৎপলা ওরফে পলির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসে হানা দেয়৷ অবৈধ গর্ভপাতের পর যেসব শিশুর মৃত্যু হয়েছিল তাদের নিথর দেহ পুঁতে রাখা হয়েছে সংস্থা-লাগোয়া জমিতে৷ সেই জমি ঘিরে মাটি খুঁড়ে দেহ খোঁজার কাজ শুরু করে সিআইডি৷ এছাড়াও ২০১৪ সালে বাদুড়িয়ার ওই নার্সিংহোমে এক মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল এক হাতুড়ে ডাক্তার৷ এর ফলে দীর্ঘদিন নার্সিংহোম সিল করে দেয় পুলিশ৷ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তখনই যদি তদন্ত সঠিকভাবে হত, ধরা পড়ত শিশু পাচারকারী চক্র৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement