রাহুল চক্রবর্তী: হোয়াটসঅ্যাপে পড়াশোনা। প্রশ্ন করছেন একজন ছাত্র। লিখিত উত্তর পৌঁছে যাচ্ছে সকলের কাছে। চলছে গ্রুপ ডিসকাশন। গড়ে উঠছে সম্পর্ক। সবটাই যেন বাঁধা পড়েছে ওই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে। আর ছাত্রস্বার্থে সর্বতোভাবে সাহায্য করছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বরা।
‘মৈত্রী’। মিত্র ইনস্টিটিউশন ভবানীপুর শাখার প্রাক্তন ছাত্র সংসদ। এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, প্রয়াত সংগীত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, প্রয়াত সরদ বাদক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত প্রমুখ। স্কুলের পাঠশালা শেষ করে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে। স্কুলের বর্তমান প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রাক্তনীরা বেঁধেছেন সংসদ। নাম দেওয়া হয়েছে ‘মৈত্রী’। স্কুলে পাঠরত ছাত্রদের বই-খাতা দেওয়া, কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড় পরীক্ষার আগে নেওয়া হচ্ছে মক টেস্ট। কোনও ছাত্র তাঁর শিক্ষার পরিধিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়লে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন প্রাক্তনীরা। বর্তমান সময়ের সঙ্গে সাযুয্য রেখে এবার তাঁরা চালু করেছেন হোয়াটস অ্যাপ-এ পড়াশোনা। মূলত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রদের জন্যই এই ব্যবস্থা। বিষয়টা কী রকম?
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রদের জন্য তিনটি ভাগে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়েছে। ‘মৈত্রী–লাস্ট মিনিট হেলপ’ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক-বিজ্ঞান ও উচ্চমাধ্যমিক-কমার্স। এবছর মাধ্যমিকের ৯০ জন ও উচ্চমাধ্যমিকের ৫২ জন ছাত্র হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সদস্য। ‘মৈত্রী’-র সদস্যদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, ছাত্ররা প্রশ্ন পাঠাচ্ছে এই গ্রুপে। তারপর ওই প্রশ্নের লিখিত উত্তর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনও অধ্যাপক। অনেকক্ষেত্রেই টেস্ট পেপারের প্রশ্ন ছবি তুলে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করছে ছাত্ররা, বলছিলেন স্কুলেরই এক প্রাক্তনী। তাঁরাই জানিয়েছেন, কোনও ছাত্র কোনও প্রশ্ন করলে, সেটা অন্য কোনও ছাত্রর জানা থাকলে, সে-ই উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। আবার এই প্রশ্নোত্তর-পর্বেই গড়ে উঠছে সুসম্পর্ক। চলছে বিভিন্ন বিষয়ে গ্রুপ ডিসকাশন। ভয়েস রেকর্ডিং করেও প্রশ্ন পাঠাচ্ছে ছাত্ররা। হোয়াটস অ্যাপে পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত গোরা মুখোপাধ্যায়, দেবর্ষি বিশ্বাসরা জানিয়েছেন, এই গ্রুপ ছাত্রদের কাছে জানার পরিধিকে আরও বাড়িয়ে নেওয়া।
এই হোয়াটস অ্যাপে পড়াশোনার গ্রুপ ছাত্রদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে ‘স্টার মার্কস’ পেয়েছে। স্কুলের প্রাক্তনী ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “মৈত্রী সংগঠন তৈরি হয়েছে স্কুলে পাঠরত বর্তমান ছাত্রদের জন্যই। ঐতিহ্যবাহী বাংলা মিডিয়াম স্কুলের গরিমাকে অক্ষুণ্ণ রেখে ছাত্রদের এডুকেশনালি সাপোর্ট দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।” স্কুলের আর এক প্রাক্তনী অধুনা শিক্ষক পার্থ জানা জানিয়েছেন, “ডিজিটালাইজেশনের যুগ। তাই আধুনিক ব্যবস্থায় এই হোয়াটস অ্যাপে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে বাড়িতে বসেই একটা গ্রুপে অনেক ছাত্রর উপকার হচ্ছে।” এই হোয়াটস অ্যাপে পড়াশোনা কেমন চলছে, তা নিয়মিত লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় খোঁজখবর রাখেন বলে জানিয়েছেন পার্থবাবু।
তবে এই গ্রুপ নিয়ে ছাত্রদের প্রতি কড়া শাসনও রয়েছে। অন্যান্য গ্রুপের মতো হাই, হ্যালো, গুড মর্নিং, গুড নাইট, জোকস্ পাঠানোর কোনও সুযোগ ছাত্রদের নেই। গ্রুপের অ্যাডমিনরাই জানিয়েছেন, এমন ঘটনার পর এক ছাত্রকে গ্রুপ থেকে বাদ দেওয়া এবং বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। আগামিদিনে ছাত্রস্বার্থে নানাবিধ পরিকল্পনা রয়েছে ‘মৈত্রী’-র। ছাত্রদের কথায়, ‘মৈত্রী’-র লাস্ট মিনিট হেলপ পরীক্ষার আগে সব সময়ের সঙ্গী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.