তিনি তুমুল সেলিব্রিটি। এই শহরের ঘুম ভাঙে ইথার তরঙ্গে তাঁর গুড মর্নিং শুনেই। তাঁর রসিকতায় হাসতে হাসতেই দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলেন শহরবাসী। ধোঁয়াওঠা চায়ের কাপ থেকে ডিনার টেবিল, তিনি মাতিয়ে রাখতে পারেন তাঁর সৃজনশীলতায়। আর তাই তাঁর জন্মদিন মানেই ধুম লেগেছে সেলিব্রেশনে। অথচ তাঁকে টেনে রাখে সেই সিঁড়ির তলার ঘর, নাহুমস, ভাগাভাগি করে কেক খাওয়ার দিনগুলো। সত্তায় মেশা অমলিন স্মৃতি আর আগামীর আলো আজ ঘিরে ধরছে তাঁকে। জন্মদিনে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এ আনপ্লাগড মীর।
ছোটবেলার জন্মদিন পালন থেকে আজকের সেলিব্রেশন- কতটা আলাদা হয়ে গিয়েছে ছবিগুলো?
মীর: ছোটবেলার জন্মদিনটা স্পেশাল ছিল নাহুমস বলে একটা দোকানের জন্য। এখন তো অনেক বড় বড় কেকের দোকান হয়েছে। অনেক দামি দামি কেক পাওয়া যায়। কিন্তু নাহুমস আমার কাছে খুব স্পেশাল। আগে অর্ডার দিয়ে পরে ফের আনতে যেতে হত। এখন যেরকম কেক দিয়ে যায়, বা কেউ নিয়ে আসে সেরকম ছিল না ব্যাপারটা। কিন্তু সেদিন সেই অর্ডার দিতে যাওয়া, কেক আনতে যাওয়া, এসবের মধ্যে অদ্ভুত একটা উত্তেজনা ছিল। মা-বাবাকে দেখতাম বেশ কিছুদিন আগে থেকেই প্ল্যান করতেন। হিসেব করে অর্ডার দিতে হত। মনে হত, যতটা কেক নেওয়া হল তাতে সকলের কুলোবে তো! সকলের মানে কিন্তু শুধু বাড়ির লোক নয়, পাশের বাড়ির লোকও। এখনকার ফ্ল্যাট কালচারে এই প্রতিবেশী ব্যাপারটা তো প্রায় উধাও। কিন্তু তখন আমাদের মনে হত, যতটা কেক এল তাতে আমাদের পরে ওদের সকলকে দেওয়া যাবে তো! বা ওদের সকলকে দিলে আমাদের জন্য থাকবে তো! এখন তো বাড়িতে যে ক’জন থাকে তাদের মধ্যেই কেক ভাগ বাঁটোয়ারা হয়, যা বেঁচে থাকে ঢুকে যায় ফ্রিজে। তখন তো আর ফ্রিজ ছিল না, কিন্তু ছিল ওই ভাগ করে খাওয়ার নির্ভেজাল আনন্দ। আজ সেগুলো খুব মিস করি। এখন হয়তো কেউ কেক নিয়ে চলে আসছে। বা গাড়িতে করে কেক আনা হচ্ছে। কেকের দাম দিতে গিয়ে দু’বার ভাবতে তো হচ্ছেই না, দামের কথাও মাথায় আসছে না। এই সবের মধ্যে সেই সেদিনের কেক আনতে যাওয়া, হিসেব করা, কেক ভাগাভাগি করে খাওয়া খুব খুব মিস করি।
আর কোনও মানুষকে মিস করেন? এমন মনে হয় কি যে, আজ এত আলো-হাসি-খুশির মধ্যে যদি ওঁরা থাকতেন, বড় ভাল হত?
মীর: করি তো। আমরা তখন সিঁড়ির তলায় একটা ঘরে থাকতাম। ওপরে থাকত এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবার। ওঁরা এই জন্মদিন পালনের সঙ্গে খুব জড়িয়ে থাকতেন। আমি তো গ্রাম থেকে আসা একটা ছেলে। আমার ইংরেজি শেখা, এই শহরে এখন যা হয়ে উঠেছি, তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে থেকে গিয়েছেন ওই জেনিংসরা। আজ ওঁরা এদেশে থাকেনই না। থাকেন কানাডায়। প্রতিবার জন্মদিন হলে ওঁদের কথা খুব মনে পড়ে। আর যত বয়স বাড়ে স্মৃতিরা এসে ঘিরে ধরতেই থাকে।
কোন কোন স্মৃতি নাড়া দেয়, বিশেষত এই দিনে?
মীর: আমার টিচারদের কথা খুব মনে হয়। সারা বছর হয়তো দুষ্টুমির জন্য যাঁদের কাছে কানমলা খেয়েছি, এই একটা দিন তাঁরাই আদর করতেন। আজ আর সেসব কোথায় পাব! সেই স্কুলের দিন, হাফপ্যান্ট পরা বয়স আজ মাঝেমধ্যেই স্মৃতির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। বুঝতে পারি, বয়স বাড়া মানে ফেলে আসা বয়সটাকেই খুঁজে ফেরা। জন্মদিনে সেই স্মৃতিগুলোই ঘিরে ঘিরে ধরে।
আজ নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু প্ল্যান আছে?
মীর: বিশেষ কিছু বলতে ঠিক করেছি, আজ আর কোনও কাজ করব না। সারাদিন ফ্যামিলিকে সময় দেব। আরও একটা জিনিস অবশ্য ভেবেছি নিজের জন্য।
কীরকম সেটা?
মীর: ভেবেছি নিজেকে একটু বেশি সময় দেব। যখন মিরাক্কেলে কাজ করি, তখন অবসরে অনেকে এসে জিজ্ঞাসা করে, মীরদা নতুন কী করছ? এখন এই নতুন কাজের জন্য নিজেকে একটু সময় দেওয়া দরকার। সকলে আমার উপর প্রত্যাশা রাখেন। সেটা পূরণ করতে চাই। কিন্তু এখন যা করছি সেটা যদি না কমাই, তাহলে এই নতুন কাজ করে উঠতে পারব না। জন্মদিনে এই কথাটা আরও বেশি করে মনে হয়। সকলে উইশ করে বলেন, আরও ভাল কাজ করুন। অনেক নতুন কাজ করুন। আমি এবার সত্যিই সেই নতুন কাজ করে উঠতে চাই।
নতুন কাজ বলতে কী প্ল্যান?
মীর: ঠিক করেছি টেলিভিশনের কাজ অনেকটা কমাব। ’৯৮ সাল থেকে ছোটপর্দার কাজ করছি। প্রায় ২০ বছর হয়ে গেল। এখন সত্যি বলতে কী একটু ক্লান্তই লাগে। তাই ভেবেছি সিনেমার কাজ একটু বেশি করে করব। নিজের মতো করে কিছু লিখব। নিজেও কিছু স্ক্রিপ্ট করব। সেটা করতে হয়তো এক বছর বা দু’বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু নিজেকে সময় দেব, যাতে নিজের মতো করে নতুন কিছু করতে পারি। নতুন কিছু করতে গেলে, কোথাও একটা চলতি কাজের ধারায় থামতে হয়। সেই অবসরেই আবার নতুন করে শুরু করব। এই জন্মদিনে সেটাই ভেবে রেখেছি। আশা করছি, সবাই যেভাবে উপহার দিতে পারব চেনে তার থেকে আলাদা, নতুন একটা মীরকে ।
সাক্ষাৎকার নিলেন সরোজ দরবার
ছবি- ব্যবহৃত সব ছবি মীরের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে নেওয়া
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.