অর্ণব আইচ: বয়স মাত্র ১৫ বছর। তার উপর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মঙ্গলবার গভীর রাতে এমনই এক বালিকাবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল বেহালার পর্ণশ্রী এলাকায়৷ শ্বশুরবাড়ির বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে কিশোরী ওই ‘গৃহবধূ’র ঝুলন্ত দেহ। মৃতার বাপের বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে ওই বালিকাবধূকে। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার মৃতার স্বামী, দিবস বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ।
[আরও পড়ুন: জুনের ১০ তারিখ খুলছে রাজ্যের স্কুলগুলি, ফেসবুক পোস্টে ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর]
তবে এই ঘটনা একাধিক প্রশ্ন তুলেছে৷ প্রথমত, খোদ কলকাতায় কীভাবে এক নাবালিকার বিয়ে হল? দ্বিতীয়ত, এই নাবালিকার বিয়ে হতে দেখে কেনই বা এলাকার কোনও বাসিন্দা বাধা দিলেন না? তৃতীয়ত, কেন খোদ কলকাতার বুকে নাবালিকার বিয়ের খবর, পুলিশের কানে পৌঁছাল না? ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় বেহালার পর্ণশ্রী এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, পর্ণশ্রীর পলাশি এলাকার বাসিন্দা ওই নাবালিকা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তাঁর বাবা রিকশা চালান। অতি সাধারণ ঘরের ওই কিশোরীর উপর নজর পড়ে তাঁর চেয়ে ১১ বছরের বড় প্রতিবেশী ‘দিবস দা’র। প্রথমে ওই কিশোরী বুঝতেও পারেনি যে, তাকে প্রেমের নজরে দেখতে শুরু করেছে তারই পাড়ার ‘দিবস দা’। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময়ই সে লক্ষ্য করত যে, ওই যুবক তার ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও যুবকের আচরণে বাধা দেয়নি ওই কিশোরী। তারপরই কিশোরীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় যুবক। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় ওই কিশোরীও। বছর খানেক আগে যুবক কিশোরীকে বিয়ে করে।
এলাকার বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই যুবক যখন কিশোরীকে বিয়ে করে নিয়ে আসে, তখন দুই বাড়ির লোকেরা অস্বস্তিতে পড়ে যান। কিন্তু কোনও পক্ষই গররাজি হননি। বরং বিয়ে মেনে নেন। এরপর বালিকা বধূর ঠাঁই হয় তার শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু মাথায় সিঁদুর নিয়ে সে আর স্কুলে যেতে চায়নি। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ঘরকন্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সংসার করতে গিয়ে কঠোর বাস্তবের মুখে পড়ে ১৫ বছরের ওই বালিকা বধূ। তার স্বামীর কাঁধে সমস্যা রয়েছে। তাই ভারী কোনও কাজ করতে অসুবিধা হয়। পারে না কোনও সূক্ষ্ম কাজও। তার ফলে স্বামী বিশেষ কোনও কাজই করে না। শ্বশুর ছোটখাটো কাজ করেন। সেই টাকায় কোনওমতে সংসার চলে। খাওয়া-পরা জুটে গেলেও বিয়ের পর ভাল জামাকাপড়, গয়না বা শখ-আহ্লাদ মেটাতে পারতেন না স্বামী। তখনই স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। মাঝেমধ্যে কান্নাকাটিও করত সে। কয়েক মাস আগে পরিবারের লোকেরা বুঝতে পারেন যে, বালিকা বধূ অন্তঃসত্ত্বা। কিশোরী অবস্থায় সে মা হতে চলেছে, তা মেনে নেয় দু’টি পরিবারই। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই গোলমাল বাধত তার।
[ আরও পড়ুন: এখনই গ্রেপ্তার করা যাবে না, হাই কোর্টের নির্দেশে সাময়িক স্বস্তি রাজীব কুমারের ]
অভিযুক্ত স্বামীর দাবি, মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারাটো নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখেন, ঘরের দরজা বন্ধ। স্ত্রীর সাড়াশব্দ না পেয়ে সে বাড়ির অন্যদের সাহায্যে দরজা ভেঙে দেখে, সিলিং থেকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে ওই কিশোরী। তাকে নামিয়ে রাতেই বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়। যদিও এই ঘটনার জেরে রাতেই এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ময়নাতদন্তের পর কিশোরীর বাড়ির লোকেরা পর্ণশ্রী থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন, তাঁদের মেয়েকে জামাই খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। এদিন ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই জামাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.