প্রতীকী ছবি
অর্ণব আইচ: বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে রহস্যজনক মৃত্যু নাবালিকার! নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তারই এক বন্ধুর বাড়ির থেকে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তার। ওই বন্ধুটিও নবম শ্রেণির ছাত্র। দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও ছিল বলে খবর। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, তাদের মেয়ের শরীরে বিষক্রিয়া হয়েছে। বন্ধুর বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করার পর কীভাবে বছর পনেরোর ওই কিশোরীর শরীরে বিষক্রিয়া হল, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনায় মানিকতলা থানায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ওই নাবালিকার পরিবার। সূত্রের খবর, পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। মেয়েটির পরিবারের দাবি, ওই ছাত্রের বাবা উত্তর কলকাতার একটি থানার কর্মী।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরী মানিকতলা এলাকার বাসিন্দা। ওই অঞ্চলেরই একটি একটি বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রীর সে। পড়তে যেত কোচিং সেন্টারে। সেখানেই তার সঙ্গে বাগমারি অঞ্চলেরই এক কিশোরের সঙ্গে পরিচয় হয়। ক্রমে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ঘনিষ্ঠও হয় তারা। কিশোরীর পরিবারের লোকেরা জানান, তাঁরা মেয়েকে পড়াশোনা করতে বলতেন। যদিও প্রথমে ওই কিশোরের বাবা একদিন বাড়িতে এসে জানান, তিনি ছেলের সঙ্গে ভবিষ্যতে তাঁদের মেয়ের বিয়ে দেবেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি তাঁরা। যদিও ওই বন্ধুর বাড়িতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোনও বাধাও দেওয়া হয়নি মেয়েটিকে।
পরিবারের সূত্র খবর, কিছুদিন আগে নাবালিকার সন্দেহ হয় যে, তার বন্ধু সোশাল মিডিয়ায় অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাই অন্য একটি নামে প্রোফাইল তৈরি করে নাবালিকা তার বন্ধুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। ছেলেটি ওই ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ সোশাল মিডিয়ার বান্ধবীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এর পর থেকে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য বাড়ে। তবে এর পরও দুজনের সম্পর্কে ছেদ হয়নি। মেয়েটি তার বন্ধুর বাড়িতে যাতায়াত জারি রাখে।
পরিবারের অভিযোগ, গত ২৩ মে ওই কিশোরী তার বন্ধুর মায়ের আচরণে দুঃখ পায়। সে বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। এর পর গত শনিবার দুপুরে সে ফের তার বন্ধুর বাড়িতে যায়। দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে মেয়েটির মা তাকে ফোন করে বন্ধুর বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেন। মেয়ে আসছে বলেও মাকে জানায়। এর মিনিট পনেরো পরই ওই বন্ধু তাঁকে জানায়, তাঁর মেয়ে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমোচ্ছে। এতে মেয়েটির মায়ের সন্দেহ হলেও তিনি কিছু বলেননি। বিকেল ৪টে ৩৫ মিনিটে ওই ছেলেটি ফোন করে ওই জানায় যে, তাঁর মেয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। খবর পেয়েই কিছুক্ষণের মধ্যে ওই কিশোরের বাড়িতে পৌঁছয় মেয়েটির পরিবার। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন, তাঁদের মেয়েকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তোলা হচ্ছে।
অচেতন ওই নাবালিকাকে দেখে চিকিৎসকদের ধারণা হয়, বিষক্রিয়া হয়েছে তার। ক্রমে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার সেখানেই তার মৃত্যু হয়। সোমবার কিশোরীর দেহের ময়নাতদন্ত হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটি আগে শ্বাসকষ্টে ভুগেছে। কিন্তু বিষক্রিয়ার ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। কীভাবে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে তার বিষক্রিয়া হল, মেয়েটি তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে কী খেয়েছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে। আবার মেয়েটি নিজে কোনওভাবে বিষপান করে কিনা, সেই তথ্যও জানার চেষ্টা চলছে। মেয়েটির ভিসেরা ফরেনসিকে পাঠানো হচ্ছে। মেয়েটির বাবার অভিযোগ ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। এর পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.