ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: হাওড়ায় তৃণমূলের ফাটল ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। একের পর এক ‘বেসুরো’ নেতা-মন্ত্রীদের তালিকা লম্বা হওয়া যেন সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। যা অস্বস্তিতে ফেলেছে তৃণমূলকে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের ভাঙন রোধে এখন মরিয়া ঘাসফুল শিবির। হাওড়ার সংগঠন সামলানোর দায়িত্ব ফিরহাদ হাকিমের কাঁধে বুধবার তুলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দায়িত্ব পেয়ে প্রথমেউ তিনি ফোন করলেন ‘বেসুরো’ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বেশ কিছুক্ষণ কথাও হল দু’জনের।
বেশ কয়েকদিন আগে প্রথমবার টালিগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। যাঁরা তোষামোদ করতে পারেন তাঁরাই দলে ভাল পদ পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। মন্ত্রীর ওই মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয় জোর জল্পনা। তারপরেও এক সভায় শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী উদ্ধৃত করে মন্তব্য করেছিলেন রাজীব। অনেকেই মনে করেছিলেন, পরোক্ষে ঘাসফুল শিবিরের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন তিনি। রাজীবের মানভঞ্জন করার চেষ্টা করা হয়। দফায় দফায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা নস্যাৎ করে দেন। তা সত্ত্বেও একাধিক দলীয় বৈঠকে গরহাজির রাজীব। তার জন্যই জল্পনা রাজীবকে নিয়ে। গেরুয়া শিবিরে তাঁর যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা ক্রমে জোরাল হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে হাওড়ায় তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থা ভাল নয়। ‘বেসুরো’দের তালিকায় রাজীব নাম লিখিয়েছেন অনেকদিন আগেই। লক্ষ্মীরতন শুক্লা সদ্যই দল এবং মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন। বৈশালী ডালমিয়াও দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। এই প্রেক্ষাপটেই হাওড়ার দায়িত্ব ফিরহাদের কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানভঞ্জনের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে ফিরহাদ হাকিমকে (Firhad Hakim)। বুধবার দায়িত্ব পেয়েই রাজীবকে ফোন করেন তিনি। বোঝানোর চেষ্টা করেন। ক্ষোভ প্রশমনে দরকারে সামনে বসে আলোচনাও হবে বলে জানান। এখনই বড়সড় সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অনুরোধও করেন ফিরহাদ। এ বিষয়ে বনমন্ত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। জবাব পাওয়া যায়নি মেসেজেরও। ফিরহাদ কি এরকম পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন? রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই প্রশ্ন।
ফিরহাদ ছাড়াও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে বিভিন্ন জেলা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নদিয়া, জঙ্গলমহলের দায়িত্বে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সুব্রত বক্সিকে দেওয়া হয়েছে কোচবিহার এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের দায়িত্ব। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের দায়িত্বে অরূপ বিশ্বাস। দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রত মণ্ডলের কাঁধে রয়েছে বীরভূম। শুভাশিস চক্রবর্তী সামলাবেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.